দুই জাসদের প্রতিক্রিয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে জাসদের ভূমিকা নিয়ে চলা বিতর্ক নতুনমাত্রা পেয়েছে। দৃশ্যত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। জাসদকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়ানোকে ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। খোন্দকার মোশতাকের সরকারে আওয়ামী লীগ নেতাদের অংশগ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জাতীয় চার নেতাসহ হাতেগোনা কয়েকজন ত্যাগী নেতা ছাড়া বহুজনই সেই দিন মোশতাকের করুণাভিক্ষার জন্য, হালুয়ারুটির ভাগাভাগির জন্য তার চারপাশে ভিড় জমিয়েছিল। প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আওয়ামী লীগ নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতা নেয়। ওই সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যও ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। এদিকে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ গোফরান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন এক বিবৃতিতে বলেছেন, উপনিবেশিক আইন-কানুন ও রাষ্ট্র প্রশাসন দিয়ে স্বাধীন দেশ পরিচালনা এবং বাকশাল গঠনই বঙ্গবন্ধু হত্যার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অন্যথায় কোন ষড়যন্ত্রকারী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাহস পেত না। অথচ আজও একই ধরনের আইন-কানুন ও রাষ্ট্র প্রশাসন বিদ্যমান রয়েছে। তা পরিবর্তনের উদ্যোগ না নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস চলছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জাসদই বঙ্গবন্ধু হত্যার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল। স্বাধীনতা বিরোধীরা কখনোই বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারতো না যদি গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি, মানুষ হত্যা করে এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করতো। বঙ্গবন্ধু যেদিন মারা যান সেদিন কর্নেল তাহেরও রেডিও স্টেশনে যান। পরদিন বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদের ভূমিকার তদন্ত এবং মন্ত্রিসভা থেকে হাসানুল হক ইনুর পদত্যাগ দাবি করেন। ওই রাতেই এক বিবৃতিতে জাসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও আসাদুজ্জামান রিপনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়। মঙ্গলবার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্য সমর্থন করে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। একইদিনে প্রাক্তন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা, বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাবি করেন, ১৯৭৪ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও কালে হাসানুল হক ইনু এবং অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনই প্রথম গুলি করেন।
কারা মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল?: ইনু
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জাসদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ নাকচ করে দলটির সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মোশতাক সরকারে জাসদের কেউ যোগ দেয়নি। হালুয়া-রুটির ভাগের জন্য মোশতাক সরকারে কারা ভিড়েছিল, তা সবাই জানে।
গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জাসদকে জড়ানোর যে অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র, এটার কোন ভিত্তি নেই। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া শেষে বিচারকরা রায় ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সাক্ষীর জেরা থেকে অভিযোগপত্র কোন জায়গায় জাসদ সম্পর্কে একটি শব্দও লেখা নেই। তিনি বলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১৯৭২ সালে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে একটি আইনানুগ দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে। সেই নির্বাচনে জাসদ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭২ থেকে ৭৫ অর্থাৎ ৭৫-এর ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত জাসদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, কীভাবে চলেছে, কী বিষয় নিয়ে জাসদ বলতো এগুলো পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই ব্যাপারটি নিয়ে আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। কারণ এটা প্রকাশিত ব্যাপার। তিনি বলেন, সামপ্রতিককালে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির কতিপয় নেতা হঠাৎ করেই জাসদের বিরুদ্ধে বিষোদগার বা সমালোচনা শুরু করেছেন। আমি বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতৃবৃন্দ যারা একই সুরে জাসদের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছেন, তাদের সঙ্গে কোন বাকযুদ্ধে লিপ্ত হতে চাচ্ছি না। বাকযুদ্ধ করার কোন ইচ্ছাও আমার নেই। শেখ সেলিম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ১৪ দলীয় জোটের বৃহত্তম শরিক আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান নয় জানিয়ে ইনু বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির  নেতাদের অভিন্ন বক্তব্যে তাদের জোটের ঐক্যের ভেতর বিভ্রান্তির জাল তৈরি করছে। আওয়ামী লীগ থেকে সমালোচনা হওয়ায় জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ইনু বলেন, এটা তো আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান না। আওয়ামী লীগ ও জাসদ নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ, আন্দোলন-নির্বাচন এবং সরকার পরিচালনায় আমরা একসঙ্গে আছি এবং আমরা মনে করি, এই লড়াইটা শেষ পর্যন্ত নেওয়ার জন্য ঐক্য দরকার।
পঁচাত্তরে মোশতাক সরকারের বিরোধিতা করে জাসদের প্রচারপত্র বিলির কথা তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনকালে জাসদের অনেক  নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ৭০ এর বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। মোশতাকের ক্ষমতা দখলের পরে জাসদের কোন নেতা এবং দলগতভাবে জাসদ মোস্তাকের সঙ্গে হাত মেলায়নি। তবে কারা খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল? কারা খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল? সেটা আপনারা জানেন, দেশবাসী জানে। এরকম পরিস্থিতিতে আমি বলব যে, যারাই এ কথাটা বলছেন তারা হয় ইতিহাস জানেন না অথবা সচেতনভাবে অন্য কোন  ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে জানবাজির লড়াই চলছে। খালেদা জিয়ার হত্যা, খুনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে চলেছি। সেই সময়ে কতিপয় ব্যক্তি এমন কিছু কথা বলা শুরু করেছেন, যা ঐক্যের ভেতর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। জাসদের উপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্ন তুলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই আক্রমণ বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করবে, তাদের রাজনৈতিকভাবে আড়াল করবে। মহাজোট সরকারের সফলতা যাদের সহ্য হচ্ছে না, তারাই ঐক্যর ভেতর বিভ্রান্তির জাল তৈরি করছেন। জাসদের  কোন কর্মকাণ্ডে ভুল ছিল কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, চলার পথে বহু পদক্ষেপ নিতে হয়, কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক, এটা ইতিহাস বিচার করবে। জীবদ্দশায় এটা বিচারের মালিক আমি না।
কমিশন করে ৭২-৭৫ এর সব ঘটনা তদন্ত হোক: বাদল
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশোতে অংশ নিয়ে জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, এটা অনস্বীকার্য জাসদ বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের বিরোধিতা করেছিল। এটা অনস্বীকার্য জাসদ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পতন চেয়েছিল। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জাসদের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি বলেন, আমি সংসদে স্পষ্ট করে বলেছি, ৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত জাসদ যা কিছু করেছে তার সবকিছু ঠিক করেছে সে দাবি আমরা করি না। কিন্তু অন্যরা যা করেছে এর বিচার আমরা ইতিহাসের ওপর ছেড়ে দিলাম। জাসদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ব্যাংক ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, এসব কর্মকাণ্ড যে শুধু আমরাই করেছি তা নয়। সাহস থাকলে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন হোক না। সে কমিশন ৭২-৭৫ সালের সব ঘটনার তদন্ত করবে এবং শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে দল হিসেবে জাসদের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোথাও গেলে সেটা তারাই বলতে পারবেন। জাসদের নিউক্লিয়াসের কোন সিদ্ধান্ত ছিল না এ ধরনের ঘটনায় জড়ানোর। আলোচনায় অংশ নিয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, কেবল ইতিহাসের ওপর দায় চাপালে চলবে না। অতীতকে তো পরিবর্তন করা যাবে না। তিনি বলেন, ১৫ই আগস্ট জাসদের প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান। তিনি ওইদিন দেশে ছিলেন না। জাসদের অন্য প্রধান নেতারা ছিলেন কারাগারে। তবে ওইদিন সকাল ৯টায় কর্নেল তাহের ইনুকে নিয়ে ঢাকা বেতারে গিয়েছিলেন। কর্নেল তাহের খোন্দকার মোশতাকের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, খোন্দকার মোশতাক যেন মার্শাল ল’ জারি করেন। বাকশাল বাতিল করে জাতীয় সরকার গঠনেরও দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, তাহেরতো এখন আর জীবিত নেই। ইনুকে আপনারা জিজ্ঞেস করতে পারেন তিনি আদৌ বেতারে গিয়েছিলেন কি-না গেলে কেন গিয়েছেন। তবে জাসদের এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত ছিল না।
ইনু ও আনোয়ার-ই প্রথম গুলি করে: গয়েশ্বর
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম মনসুর আলীর বাড়িতে গুলিবর্ষণ করতে দেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, গুলিটা প্রথম আনোয়ার হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বেই শুরু হয়। মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, ১৯৭৪ সালে আমি জাসদে ছিলাম। আমাদের একটা সিদ্ধান্ত হলো, আমরা গ্রেপ্তার-অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করবো। কিন্তু ঘেরাও কর্মসূচিতে সশস্ত্র আক্রমণ, এটা আমাদের জানা ছিল না। ছিলেন কে- হাসানুল হক ইনু। আর কে ছিলেন, কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকদিন আগের ভিসি আনোয়ার হোসেন। আমরা জানি, মন্ত্রীর বাড়ির গেটের সামনে যাব, সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আসবে, স্মারকলিপি নেবে। কিন্তু গুলিটা প্রথম এই আনোয়ার  হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বেই শুরু হলো। যখন আত্মরক্ষার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন থেকে পাল্টা গুলি এলো তখন আমরা দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করছি। কারও হাত নেই, কারও পা নেই। কতজন মারা গেছে- তখন জানার সুযোগ ছিল না। গয়েশ্বর আরও বলেন, ৭৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক দেয় জাসদ। সেই হরতালে বোমা ব্যবহারের জন্য বোমা বানানোর দায়িত্ব দেয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার নিখিল চন্দ্র সাহাকে। যাত্রাবাড়ীর একটি পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে নিখিল বোমা বানাতে যায়। বোমাতে মিশানো জিনিস কোনটা আগে দিতে হয়, পরে দিতে হয়- এরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে হঠাৎ করে তার নিজের হাতের মধ্যে একটা বোমা ফাটে। নিখিলের সম্মানার্থে পেট্রলবোমার নাম রাখা হলো ‘নিখিল’। আপনারা তথ্যমন্ত্রীকে (ইনু) জিজ্ঞাসা করবেন, বোমার অপর নাম নিখিল ছিল কি না? বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশে প্রথম গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র রাজনীতি শুরু করেছেন। এটা ঐতিহাসিক সত্য।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই বঙ্গবন্ধু খুন: হাফিজ
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। বলেছেন, শেখ মুজিব হত্যার সঙ্গে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ হত্যার দিন আমি জিয়াউর রহমানের বাসায় গিয়ে দেখেছি তিনি তখন শেভ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জাতীয় সংসদে মোশতাক সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমান যাননি। কোন ধরনের লুটপাট করে তার ইউনিফর্মের সম্মান তিনি নষ্ট করেননি। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। এ হতাকাণ্ডের পর যে সরকার গঠিত হয়েছিল সেটিও ছিল আওয়ামী লীগের সরকার। আসলে আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যারা কেবল নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করা জন্য অন্যের চরিত্র হরণ করে। এদের কারণেই দেশ পিছিয়ে পড়ছে। সরকারের কর্মকাণ্ডে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লেশমাত্র নেই মন্তব্য করে মুক্তিযোদ্ধা এ নেতা বলেন, ৭২ থেকে ৭৫ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বক্তব্যের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজে পাওয়া যায়। তথ্যপ্রযুক্তির আইনে ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, এ ধারা মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি, গণতন্ত্রের পরিপন্থি। ধারাটি মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করে নেয়। তাই অবিলম্বে এ ধারা বাতিল করতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার নানা কৌশল অবলম্বন করে বিএনপির স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে কোন গণতান্ত্রিক রাজনীতি থাকবে না। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর এ আন্দোলন হবে জনগণের আন্দোলন। কারণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের নামে জনগণের সঙ্গে রসিকতা শুরু করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় যদি আমরা যথার্থভাবে বহন করতে চাই। তাহলে যে কারণে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম; সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। কারণ গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প কোন পথ নেই। সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, গণতন্ত্রকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিন। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতা করুন। গ্রেপ্তারকৃত বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা ব্যাহত হবে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মো. আবু জাফর বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.