বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকায় আবের ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ

সংবাদ সম্মেলনে শিনজো আবে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের ভূমিকায় ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। জাপানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি এই দুঃখ প্রকাশ করেন। আবে আরও বলেন, তাঁর দেশের অতীতের সরকারগুলো যে ক্ষমা চেয়েছিল, তা বহাল থাকবে। তবে জাপানের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ নিয়ে আর দুঃখ প্রকাশ করতে হবে না। খবর এএফপি ও বিবিসির। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হাজার হাজার এশীয় নারীকে জাপানি সেনাদের যৌনদাসী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করাসহ নানা নৃশংসতার ঘটনায় আবে ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করবেন কি না, এ নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এশিয়ায় জাপানি সেনাদের নির্মমতার সবচেয়ে বড় শিকার হয় চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া। দেশ দুটি বরাবর বলে আসছে, জাপান কখনোই অতীতের এসব নৃশংসতার জন্য পুরোপুরি অনুশোচনা প্রকাশ বা নিঃশর্ত ক্ষমা চায়নি।
যদিও জাপানের অতীতের একাধিক সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে আগ্রাসী ভূমিকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেয়। শিনজো আবে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিবৃতি দেন। তিনি জাপানের অতীতের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার ভাষা থেকে সরে আসেননি। সতর্কতার সঙ্গে দেশটির বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসকে উপনিবেশবিরোধী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ চলাকালে জাপান ‘নিরপরাধ অসংখ্য মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি করে ও তাদের জন্য সীমাহীন দুঃখের কারণ হয়ে ওঠে’। আবে বলেন, অতীতের সরকারগুলোর আনুষ্ঠানিক লিখিত ক্ষমা প্রার্থনার ভাষা ভবিষ্যতে অবিকৃত রাখা হবে। তবে তিনি এটিও স্পষ্ট করে বলেন, দুনিয়াবাসী এমনটি আশা করতে পারে না যে অতীতের ওই কর্মকাণ্ডের জন্য জাপান চিরকাল ক্ষমা চাইতেই থাকবে। রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী আবে বলেন, ‘জাপানের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বেশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের। ওই যুদ্ধ নিয়ে তাদের কিছু করার নেই। আমরা চাই না, আমাদের ছেলে, নাতি ও আরও পরের প্রজন্ম ক্ষমা চাওয়া অব্যাহত রাখুক।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাজারো এশীয় নারীকে জাপানি সেনাদের যৌনদাসী হতে বাধ্য করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আবে সরাসরি কোনো কথা বলেননি। তবে তাঁদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিংশ শতাব্দীর যুদ্ধগুলোতে অনেক নারীর মর্যাদা ও সম্ভ্রম ভয়ানকভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল।
আগে জাপান যা বলেছে
তোমিচি মুরায়ামা, ১৯৯৫ সাল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের ৫০তম বার্ষিকীতে তখনকার প্রধানমন্ত্রী তোমিচি মুরায়ামা বলেছিলেন, নিকট অতীতের একটি সময়ে ভ্রান্ত এক জাতীয় নীতি অনুসরণ করে জাপান যুদ্ধের পথে পা বাড়িয়েছিল। ...দেশটি ঔপনিবেশিক শাসন-আগ্রাসনের মাধ্যমে বিশেষ করে এশীয় দেশসহ অনেক দেশের মানুষের বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ...আমি আবারও গভীর অনুশোচনা ও আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করছি।
জুনিচিরো কোইজুমি, ২০০৫
কোইজুমিও ‘ঔপনিবেশিক শাসন’, ‘আগ্রাসন’, ‘গভীর অনুশোচনা’ ও ‘দুঃখপ্রকাশ’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন। তবে ২০০১-২০০৬ সালের শাসনকালে কোইজুমি কয়েকবার বিতর্কিত ইয়াসুকুনি মন্দিরে যাওয়ার কারণে প্রতিবেশী চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৫ লাখ জাপানিকে শ্রদ্ধা জানাতে ইয়াসুকুনি মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই নিহত জাপানিদের অনেকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত।
ইয়োহেই কোনো, ১৯৯৩
তখনকার মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োহেই কোনো ১৯৯৩ সালে একটি বিবৃতি দেন। জাপানি সেনারা যে চীনা ও কোরীয় নারীদের যৌনদাসী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করেছিলেন, তাঁদের বিষয়ে সরকারি তদন্তের পর ওই বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ওই ঘটনা বহুসংখ্যক নারীর সম্মান ও মর্যাদাকে গুরুতর-ভাবে আহত করেছিল। এই অবকাশে জাপান সরকার ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ ও অনুশোচনা প্রকাশ করতে চায়। সূত্র: এএফপি

No comments

Powered by Blogger.