অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ডাকবেন না -প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুশীল সমাজের সেই সব সদস্য, যাঁরা দেশে গণতন্ত্র দেখেন না এবং সংবিধান সংশোধনের জন্য কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন—তাঁদের সমালোচনা করে আরও গণতন্ত্রের দাবির ছদ্মবেশে অগণতান্ত্রিক কোনো শক্তিকে ডেকে না আনতে তাঁদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানীর সার্কিট হাউস সড়কে গত বুধবার তথ্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের (সুশীল সমাজ) সাম্প্রতিক দাবি গণতন্ত্রের প্রতি আর একটি আঘাতকে আহ্বান করছে। কিন্তু আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটা রক্ষা করতে পারি। সুশীল সমাজের ওই সব সদস্যের অনেকে উপদেষ্টা হতে, চাকরি পেতে এবং অনুকম্পা লাভের জন্য সামরিক স্বৈরাচারের দরবারে ধরনা দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার দুয়ার খুলে দেওয়ায় সুশীল সমাজের ওই সব সদস্যের গণতান্ত্রিক চেতনা ও প্রস্তাব-আকাঙ্ক্ষা বেড়েই চলছে। তাঁরা যত গণতন্ত্র ভোগ করছেন, তাঁরা তা আরও পেতে চান। এটা প্রশংসনীয়। তবে এই দাবির বিপরীত দিকটাও তাঁদের ভেবে দেখা দরকার। আমি আশা করি, তাঁরা অন্তত এ কথাটুকু মনে রাখবেন যে আওয়ামী লীগ তাঁদের মতামত প্রকাশের জন্য মিডিয়ার স্বাধীনতা দিয়েছে এবং দেশে গণতন্ত্রের পথযাত্রা পুনরুজ্জীবিত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বারবার কশাঘাতের শিকার হয়েছে। অবৈধ দখলদারেরা গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। তিনি বলেন, দেশ কেবল স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির নেতৃত্বে উন্নত হতে পারে। কিন্তু ২১ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তারা দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধ্বংস করেছে। একটি শিশু বিকৃত ইতিহাস থেকে কিছুই শিখতে পারে না। কিন্তু এ দেশে এটাই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সরকারের সাফল্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অধিকতর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে গণযোগাযোগ খাতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় উগ্রবাদীদের চারণক্ষেত্র নয়। এ দেশে সব ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিবেশে বসবাস করবে। তিনি তাঁর সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘সরকার সমালোচনায় ভীত নয়। গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের শোধরাতে সহায়তা করে। তবে মিডিয়ার এমন কিছু করা উচিত নয়, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং অপশক্তির হাতকে শক্তিশালী করে।’
প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ১৬ তলা এই তথ্য ভবনে থাকবে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি), গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ও চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের প্রধান কার্যালয়। এ ছাড়া এ ভবনে আধুনিক গ্রন্থাগার, গবেষণাকেন্দ্র, চলচ্চিত্র প্রদর্শন হল (ফিল্ম প্রোজেকশন হল), মিলনায়তন ও ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৮ দশমিক ৬৪ কাঠার ওপর তথ্য ভবনের নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য একটি পৃথক ওয়েজবোর্ড গঠনের বিষয় সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তিনি বলেন, জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিকৃত অথবা ভুল তথ্য পরিবেশনেরও সুযোগ বিনষ্ট হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং রাষ্ট্র অথবা সমাজের জন্য ক্ষতি হয়, এমন তথ্য পরিবেশন না করা।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা, সেগুনবাগিচা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক বলয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের মহাপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, তথ্য ভবন, শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট একসঙ্গে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবে।

No comments

Powered by Blogger.