তারেক-মিশুক নিহত হওয়ার ৪ বছর পূর্তি: বিচারকাজে ধীরগতি

সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর চার বছর পূর্তি হলো আজ ১৩ আগস্ট। কিন্তু এত দিনেও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। বাদী ও সাক্ষীদের অনেকেই আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারকাজ চলছে ধীরগতিতে।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে কাগজের ফুল চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট দেখে ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় ফিরছিলেন তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর ও সহযাত্রীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হন।
নিহত অপর তিনজন হলেন মাইক্রোবাসের চালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ও কর্মী জামাল হোসেন। এ দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিল্পী ঢালী আল-মামুন ও তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগম জলি এবং তারেক মাসুদের সহকারী মনীষ রফিক আহত হন।
পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় ঘিওর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. লুৎফর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় বাসের চালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়। পরে ঘিওর থানার তৎকালীন ওসি আশরাফ-উল ইসলামকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২১ মার্চ মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে বাসচালক জামিরের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, সাধারণ জখম, গুরুতর জখম, অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানো এবং মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ আনা হয়। একই বছরের ১০ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ আদালত এই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি মামলাটি মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই দিন মামলার বাদী হাজির হননি। এরপর বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করা হলেও তিনি গরহাজির থাকেন। তাঁকে হাজির হতে আদালত একাধিকবার সমন জারি করেন।
বাদী লুৎফর রহমান এই মামলার অন্যতম সাক্ষী। এ ছাড়াও ক্যাথরিন মাসুদ, ঢালী আল-মামুন, দিলারা বেগম, ইকবাল হোসেন, অনীল কুমার বিশ্বাস, বোমকেশ সরকার, ফারুক হোসেন ও সাথী সরকারসহ ৩৮ জনকে সাক্ষী করা হয়। ধার্য দিনে অনুপস্থিত থাকায় আদালত বেশ কয়েকজন সাক্ষীর বিরুদ্ধেও সমন জারি করেছেন। তিন বছর পর মামলাটির প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর। ওই দিন বাসচালক জামিরের উপস্থিতিতে ক্যাথরিন মাসুদ, ঢালী আল-মামুন এবং তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগম আদালতে সাক্ষ্য দেন। এতে দুর্ঘটনার জন্য তাঁরা বাসচালককে দায়ী করেন। ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট জামির গ্রেপ্তার হন। পরে একই বছরের ১৭ নভেম্বর তিনি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
মামলার বাদী লুৎফর রহমান বর্তমানে ঢাকা মহানগর সিআইডিতে মালিবাগে কর্তব্যরত আছেন। তিনি গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে জানান, এর আগে পেশাগত কারণে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালনের কারণে সময়মতো সমন পাননি। যখন সমন পেয়েছেন, তখন আদালতে গিয়েছেন। সর্বশেষ তিন থেকে চার মাস আগে এই মামলায় আদালতে তিনি সাক্ষ্য দেন।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুস সালাম বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
ফরিদপুরে স্মরণসভা: ফরিদপুরে আজ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে তারেক মাসুদকে স্মরণ করা হবে। তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে সকাল ১০টায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সদরের নূরপুর গ্রামের বাড়িতে তারেক মাসুদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। বিকেল তিনটায় স্মরণসভা ও সন্ধ্যা সাতটায় তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হবে। এ ছাড়া দিনব্যাপী শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
এতে তারেক মাসুদের ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিত থাকার জন্য তাঁর স্ত্রী ও তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারপারসন ক্যাথরিন মাসুদ বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.