নকল বন্ধ হওয়ায় ফলাফলে ধস?

বরগুনার আমতলী উপজেলায় এবার এইচএসসির ফলাফলে ধস নেমেছে। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে শিক্ষকেরা মনে করছেন।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, আমতলী ডিগ্রি কলেজ থেকে গত বছর ১০৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও এবার পেয়েছেন মাত্র আটজন। গত বছর এ কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৬০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এবার পেয়েছেন চারজন। গতবার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৪০ জন ও মানবিক বিভাগে চারজন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এবার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে চারজন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। মানবিক বিভাগে কেউ জিপিএ-৫ পাননি।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, আমতলী ডিগ্রি কলেজ বাদে অন্য চারটি কলেজে কোনো জিপিএ-৫ নেই। গত বছর ইউনুস আলী খান কলেজ থেকে চারজন, বকুল নেছা মহিলা কলেজ থেকে চারজন, উত্তর সোনাখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে একজন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। গত বছর এ উপজেলায় ১১৬ জন জিপিএ-৫ পেলেও এবার আটজন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এবার আমতলীতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৯৬৫ জন। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল ৯৮৭ জন। এবার বিজ্ঞান বিভাগে ১৪৭ জনে ৭৬ জন, মানবিকে ২০৬ জনে ১৪৩ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ১৯৯ জনে ১৫২ জন পাস করেন। গত বছর বিজ্ঞানে ১১৮ জনে ১১৬ জন, মানবিকে ২০৪ জনে ১৮৯ জন ও ব্যবসায় শিক্ষায় ১৬৫ জনে ১৫৭ জন পাস করেন।
শিক্ষকেরা বলেন, গত ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে আমতলী উপজেলার পাঁচটি কলেজের শিক্ষকেরা সমঝোতা করেন। এরপর পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট আগে মুঠোফোনে নৈর্ব্যক্তিক ও রচনামূলক প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে নিয়ে যেতেন একজন শিক্ষক। এরপর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকদের একটি প্যানেল সেসব প্রশ্নের উত্তর লিখে পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করতেন বলে অভিযোগ ওঠে। ৪ এপ্রিল পদার্থবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে আমতলী ডিগ্রি কলেজ ও বকুল নেছা মহিলা কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়।
৯ মে প্রথম আলোয় ‘শিক্ষকদের সহযোগিতায় নকল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড ও বরগুনা জেলা প্রশাসন দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ১০ মে বরিশাল বোর্ডের কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। ১১ মে পরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজন শিক্ষককে পাঁচ বছরের জন্য সব শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সব পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি আমতলী কলেজ কেন্দ্রটি সাময়িক পটুয়াখালী মহিলা কলেজে স্থানান্তর করা হয়।
শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটির সদস্য ও কলেজ পরিদর্শক লিয়াকত জুয়েল বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমতলীতে কতিপয় শিক্ষকের নেতৃত্বে পরীক্ষায় অসদুপায় ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর আমরা কঠোরভাবে এসব দমন করি এবং স্বচ্ছভাবে পরীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নিই। এ কারণে এবার ফলবিপর্যয় হতে পারে। আশা করি, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে পরীক্ষার হলে যাবে এবং এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেতে পারবে।’

No comments

Powered by Blogger.