শোক আর প্রতিবাদে নাগাসাকি হামলা স্মরণ

নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্রের আণবিক বোমা হামলার
৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শহরটির পিস পার্কে
স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানে স্থাপিত
বিশাল মূর্তিটি আণবিক বোমার ভয়াবহতার প্রতি
সতর্কতা ও একই সঙ্গে শান্তির আশ্বাসের প্রতীক
জাপানিরা গত রোববার ভাবগম্ভীর ও শোকাবনত পরিবেশে নাগাসাকি শহরে মার্কিন বাহিনীর আণবিক বোমা হামলার ৭০ বছর পূর্তি পালন করেছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের উপস্থিতির সমালোচনা করেন। আবে জাপানি সামরিক বাহিনীর বিদেশে সংঘাতে যোগ দেওয়ার পথ সুগম করতে চান বলে তাঁরা ক্ষুব্ধ। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জাপানের আরেক শহর হিরোশিমায় ভয়াবহ আণবিক বোমা ফেলার তিন দিনের মাথায় নাগাসাকিতে বোমা ফেলে মার্কিন বাহিনী। তাদের প্রকৃত লক্ষ্যবস্তু ছিল কোকুরা। কিন্তু মেঘের কারণে বিমান থেকে বোমা ফেলতে নাগাসাকিকে বেছে নেওয়া হয়। অবিশ্বাস্য রকম শক্তিশালী সেই বোমার আঘাতে সেখানকার কমপক্ষে ৭০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। হিরোশিমা ও নাগাসাকিই বিশ্বে আণবিক বোমার ভয়াবহ ক্ষমতার প্রথম শিকার।
বোমায় নাগাসাকির প্রায় ৩০ শতাংশ
ধ্বংস হয়ে যায়l ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
শিশুদের দিয়ে একটি ঘোষণা পাঠ করানোর মধ্য দিয়ে নাগাসাকির গতকালের স্মরণানুষ্ঠান শুরু হয়। অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে ৭৫টি দেশের অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন টোকিওতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্যারোলিন কেনেডিও। এরপর বেলা ১১টা ২ মিনিটে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। তা শেষ হলে বাজানো হয় ঘণ্টাধ্বনি। ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট ঠিক বেলা ১১টা ২ মিনিটেই নাগাসাকিতে ফেলা বোমাটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। নাগাসাকির মেয়র তোমিহিসা তাউই অনুষ্ঠানে একটি শান্তি ঘোষণা পড়ে শোনান। তিনি বলেন, দেশের শান্তিবাদী সংবিধানে পরিবর্তন আনতে প্রধানমন্ত্রী আবের প্রচেষ্টা নিয়ে ‘বড় পরিসরে অস্বস্তি’ রয়েছে। আরও বক্তব্য দেন নাগাসাকি হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পরও প্রাণে বেঁচে যাওয়া সুমিতেরু তানিগুচি। বর্তমানে ৮৬ বছর বয়সী মানুষটি যে যন্ত্রণা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন, তা বর্ণনা করে শোনান। সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আবের প্রচেষ্টা তিনি মানবেন না বলেও ঘোষণা দেন সুমিতেরু। বক্তব্য শেষে তিনি আবের কাছাকাছি একটি আসনেই বসেন। এ সময় সুমিতেরু আবেকে বলেন, ‘জাপানের শান্তিবাদী সংবিধানে হস্তক্ষেপ করবেন না।’
অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে আবে বলেন, জাপান একটি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে এখনো সংকল্পবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জাপানি সামরিক বাহিনী আক্রান্ত মিত্র দেশের পক্ষে লড়াইয়ে অংশ নিতে পারবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর জাপান একটি শান্তিবাদী সংবিধান প্রণয়নে বাধ্য হয়। তখন থেকে দেশটি বিদেশে যুদ্ধ-সংক্রান্ত বিষয়ে সেনা পাঠাতে পারে না।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের দেওয়া একটি বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়। এতে তিনি বলেছেন, ‘নাগাসাকিই সর্বশেষ, এটা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্রের কোনো ধরনের ব্যবহার হতে দিতে পারি না। এর মানবিক তাৎপর্য অনেক বেশি। আর কোনো নাগাসাকি নয়। আর কোনো হিরোশিমা নয়।’

No comments

Powered by Blogger.