অন্যদের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করুন: মিয়ানমার

নিজেদের ভূখণ্ডে বিদেশী কোন সামরিক অভিযান চালাতে দেবে না মিয়ানমার। প্রত্যেক দেশকে অবশ্যই অপর দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। মঙ্গলবার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভারতের সামরিক অভিযান পরিচালনার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনার মুখে এ মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের পরিচালক জ তে। টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াকে টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলতে চাই, মিয়ানমারের মাটি ব্যবহার করে কোন বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে আমরা দেব না। আর আমরা ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করবো। তবে আমি আবারও জানাতে চাই, আমাদের ভূখণ্ডে কোন বিদেশী সেনাকে প্রবেশ করার অনুমতিও আমরা দেব না। এর আগে অভিযানের পরপর অবশ্য তিনি বলেছিলেন, ভারতের অভিযান মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তের পাশে হয়েছে বটে। তবে তা পরিচালিত হয়েছে সীমান্তের ভারতীয় অংশে। মূলত অভিযানের বিষয়ে প্রকাশ্যে বিভিন্ন মন্তব্য করে সমস্যাটা প্রথম সৃষ্টি করেন ভারতের তথ্য ও সমপ্রচার প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাথোড়। অভিযানের পর এক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী খুব সতর্কতার সঙ্গে অভিযানের স্থান হিসেবে উল্লেখ করে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের পার্শ্ববর্তী এলাকাকে। সীমান্তের কোন পাশে অভিযান পরিচালিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছুই উল্লেখ করা ছিল না। কিন্তু রাজ্যবর্ধন রাথোড়ই প্রথম গণমাধ্যমকে জানান, অভিযান হয়েছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। তার দাবি, এ ধরনের অভিযান পাকিস্তানসহ সন্ত্রাসবাদ লালনকারী প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি এক ধরনের বার্তাও। পাকিস্তানও এ কথায় বেজায় চটেছে। দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে রাজ্যবর্ধনসহ ভারতীয় নেতাদের বিভিন্ন মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। পাল্টা তোপ দেগেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাপ্রধানসহ অনেকে। অবশেষে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফও ভারতীয় নেতাদের বিভিন্ন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তার ভাষ্য, ভারতীয় রাজনীতিকদের এমন মন্তব্য আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে না। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে অভিযানের খুঁটিনাটি প্রকাশ্যে জাহির করলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান পরিচালনায় সমস্যা হবে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সমপর্ক বিশেষজ্ঞ হ্যাপিমন জ্যাকব বলেন, এ ধরনের গোপন ও সংবেদনশীল বিষয়কে আপনাকে সঠিকভাবে কদর করতে হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচএস পানাং বলেন, এ ধরনের প্রচারণা, বিশেষ করে রাথোড়ের বক্তব্য অপ্রাপ্তবয়স্কদের মতো হয়ে গেলো। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সহযোগিতা রয়েছে। কিন্তু এখন দেশটি অনেক আপত্তি জানাবে। আরেক বিশেষজ্ঞ বিভু প্রসাদ রাউত্রে বলেন, গত দুদিন ধরে যে ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে, তা আসলেই ভয়াবহ। হ্যাপিমন জ্যাকব মিয়ানমারের অভিযানকে পাকিস্তানে সম্ভাব্য অভিযানের ইঙ্গিত হিসেবে মানতে সমপূর্ণ নারাজ। তার মতে, মিয়ানমার আমাদের স্বেচ্ছায় অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান কোন অবস্থাতেই সেটা দেবে না। বিরোধী দল কংগ্রেসও সরকারি দল বিজেপির এমন পেশিশক্তি প্রদর্শনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দলটির দাবি, এ ধরনের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য আখেরে দেশের জন্য ভাল ফল বয়ে আনবে না। রাজ্যবর্ধন রাথোড়ের ‘৫৬ ইঞ্চি ছাতির জোর’ নিয়ে করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস মুখপাত্র আনন্দ শর্মা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কুস্তি খেলার জন্য মাঠে নামেননি। তার উচিত মন্ত্রীদের এ ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয়া। এ পরিস্থিতিতে রাথোড়ের ওপর রীতিমতো বিরক্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। দলটির এক মন্ত্রী ইকোনমিক টাইমসকে জানিয়েছেন, মিয়ানমার তাদের মাটিতে অভিযান পরিচালনার খবর প্রকাশিত হওয়ায় অসন্তুষ্ট, বিষয়টি আমরা বুঝি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাদের জাতীয় স্বার্থেরও ব্যাপার-স্যাপার আছে। কিন্তু যেহেতু আমাদের স্বার্থরক্ষা হয়েছে, তাই আমরা সেসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। তবে রাজ্যবর্ধন সরাসরি ওই মন্তব্য না করলেও পারতেন। আরেক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী সরাসরিই বললেন, রাথোড়ের এ ধরনের মন্তব্য করাই উচিত হয়নি। ওদিকে খবর বেরিয়েছে, এনএসসিএন (কে) প্রধান এসএস খাপলাং মিয়ানমারের একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নাগা ওই নেতাকে ভারত নিজের হাতে চায়। এনএসসিএন (কে) নামের নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী এ দলটিকে নির্মূলের জন্যই মঙ্গলবার মিয়ানমারে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তাই মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভারতবিরোধী শিবির নির্মূলে দেশটির সাহায্য লাগবেই ভারতের। কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মিয়ানমার সফর করবেন। সে সফরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি দূরের প্রচেষ্টা তো থাকবেই, সঙ্গে ভবিষ্যৎ অভিযানের নীলনকশাও চূড়ান্ত হবে। সর্বশেষ অভিযানটিও অজিত দোভালেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। প্রসঙ্গত, গত ৪ঠা জুন ভারতের মণিপুরে দেশটির সেনাবাহিনীর টহলদলের ওপর এনএসসিএন (কে)-এর হামলায় ১৮ সেনা নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। এর পরই মিয়ানমারের নাগা বিচ্ছন্নতাবাদী সংগঠনটির ওপর প্রতিশোধমূলক হামলার পরিকল্পনার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অজিত দোভাল। এজন্য তিনি মোদির সঙ্গে বাংলাদেশ সফরও বাতিল করে দেন।

No comments

Powered by Blogger.