বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস- ওরা শিশু শ্রমিক

গাড়ি মেরামতের কাজ করছে শিশু ইসলাম হোসেন। রাজশাহী নগরের
শহীদ কামারুজ্জামান বাস টার্মিনাল থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
হেলালের বয়স ১৪ বছর। হারুনের ১৩। ওরা দুই ভাই। একটি গাড়ি মেরামতের কারখানায় (ওয়ার্কশপ) কাজ করে। সংসারের অভাব-অনটন তাদের এ কাজে নামিয়েছে।
শুধু হেলাল ও হারুন নয়, পটুয়াখালী জেলায় এ রকম বহু শিশু শ্রমিক রয়েছে। হেলাল-হারুনদের বাড়ি পটুয়াখালী শহরের পাওয়ার হাউস সড়ক এলাকায়। বাবা আলতাফ হাওলাদার দিনমজুর। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ওরা দুজন বড় ও মেজো। বাবার আয়ে সংসার চলছিল না। তাই কিছু উপার্জনের আশায় মোটরসাইকেলের ওয়ার্কশপে কাজ শিখছে। গত বুধবার সকালে পাওয়ার হাউস সড়কের মোহাম্মদ মেশিনারিজ নামে ওই ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায়, দুই ভাই মোটরসাইকেল পরিষ্কার করছে। দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিকের পাট ওরা চুকাতে পারেনি। জানতে চাইলে হেলাল বলে, ‘কাজ না করলে খামু কী? কাজ করলে স্যাররা বকশিশ দেয়। অনেক কিছু কিইন্যা খাইতে পারি।’
পাশের ইকবাল মেশিনারিজে দেখা যায়, আরিফ (১২) ও রুবেল (১৩) নামের আরও দুই শিশু একই ধরনের কাজ করছে। আরিফের বাড়ি সদর উপজেলার ঘোপখালী গ্রামে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সে। বাবা লাল মিয়া অটোরিকশা চালান। আরিফ জানায়, সংসারে অভাব। তাই বাবা তাকে এই দোকানে কাজ শেখার জন্য দিয়ে গেছেন। দোকান মালিক প্রতিদিন ৩০ টাকা করে দেন। এ ছাড়া বকশিশ পায় সে। দোকান মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, অভাবের কারণে অভিভাবকেরা অনুরোধ করে কাজ শেখার জন্য ওদের (শিশু) দোকানে পাঠাচ্ছেন। দোকান থেকে প্রতিদিন ৩০ টাকা করে দেওয়া হলেও বকশিশসহ প্রতিদিন গড়ে ১০০ টাকার মতো পায় ওরা।
শুধু মোটরসাইকেলের ওয়ার্কশপ নয়, জেলায় ঝালাইয়ের (ওয়েল্ডিং) কারখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন দোকানে দরিদ্র শিশুরা পেটের তাগিদে শ্রম দিচ্ছে। তবে জেলায় এভাবে কত শিশু শ্রম দিচ্ছে, এর পরিসংখ্যান কোনো দপ্তরেই নেই। শিশু শ্রম প্রতিরোধে কাজ করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ কাজে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দিচ্ছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)।
জানতে চাইলে জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিসেফের ‘মাতৃ-পিতৃহীন শিশুদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম’ নামে একটি প্রকল্প তাঁরা বাস্তবায়ন করছেন। ২০১৪ সালে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। জেলার গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দি ইউনিয়নে দুই বছর মেয়াদি পরীক্ষামূলক (পাইলট) প্রকল্প হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ওই ইউনিয়নের ১২৪টি দরিদ্র পরিবারকে তাদের শিশুদের সুরক্ষার জন্য তিনটি শর্তে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। শর্তগুলো হচ্ছে: ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুকে অবশ্যই বিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে, শিশুকে অর্থনৈতিক কাজে বা শ্রমে নিয়োজিত করা যাবে না এবং শিশুকে বিয়ে দেওয়া বা করানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
শাহিদা বেগম বলেন, এ বছর তাঁরা জেলার কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নে এ কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ওই দুই ইউনিয়নে জরিপ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটির কার্যক্রম জেলার সব উপজেলায় শুরু হলে শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে। শিশু শ্রমও কমে আসবে।

No comments

Powered by Blogger.