ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের এক বছর

ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক কট্টর ইসলামপন্থী আন্তর্জাতিক সংগঠন ইসলামিক স্টেট আজ মঙ্গলবার থেকে এক বছর আগে ইরাকের একটি বিশাল অংশ দখল করে নেয়ার মাধ্যমে বড় পরিসরে আক্রমণাত্মক অভিযান শুরু করেছিল। মৌলবাদী সংগঠনটির ধ্বংসযজ্ঞে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। গত এক বছরে আইএসের ধ্বংসযজ্ঞের দিনপঞ্জির একটি অংশ প্রকাশ করেছে এএফপি। পাঠকদের জন্য সংঘর্ষের সেসব চিত্রের খানিকটা তুলে ধরা হল-
জুন ৯, ২০১৪
ইরাকের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মসুলে আক্রমণ করে আইএস। পরদিন ১০ জুন শহরটি ও একে ঘিরে থাকা নিনেভেহ প্রদেশের অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বেশকিছু বিভাগের নিয়ন্ত্রণ আইএসের আক্রমণে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।
জুন ১১
রাজধানী বাগদাদের উত্তরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর তিকরিতে হামলা শুরু করে আইএস এবং ১৩ তারিখ এ শহরটিও চলে যায় আইএসের নিয়ন্ত্রণে। ওই দিনই প্রথম শিয়া মুসলিমসহ এক হাজার সাতশরও বেশি মানুষকে হত্যার দাবি করে আইএস এবং হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যের ছবি প্রকাশ করে।
জুন ২৯
ইরাক ও সিরিয়ায় সীমান্ত ভেঙে একটি বৃহৎ ইসলামিক ‘রাষ্ট্র’ কায়েমের ঘোষণা দেয় আইএস। নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয় আবু বকর আল-বাগদাদির নাম।
আগস্ট ৮
ইরাকে আইএসবিরোধী বিমান হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এ হামলায় যোগ দেয় আরও বেশ কয়েকটি দেশ, গঠিত হয় একটি আন্তর্জাতিক জোট।
আগস্ট ১২
উত্তরাঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে নতুন করে হামলা শুরু করে আইএস এবং ইরাকের কুর্দিশ বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর গণহত্যা, দাসত্ব ও ধর্ষণের মতো বর্বরতা আরোপ শুরু হয়।
সে সময় ইয়াজিদি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে নিকটবর্তী সিঞ্জার পর্বতে আশ্রয় নিলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ শুরু হয়।
আগস্ট ১৪
তৎকালীন ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মালিকির ‘ভুল’ নীতির কারণে আইএস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান মালিকি এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন হায়দার আল আবাদি।
আগস্ট ১৯
মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলেকে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে হত্যার দাবি ও হত্যার ভিডিও প্রকাশ করে আইএস। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিক স্টিভেন সটলফ, কেঞ্জি গোতো, ত্রাণকর্মী ডেভিড হেইন্স, অ্যালান হেনিং, পিটার ক্ল্যাসিগ এবং গোতোর বন্ধু হারুনা ইউকাওয়াসহ অসংখ্য বিদেশী নাগরিককে শিরñেদের মাধ্যমে হত্যার ভিডিও প্রকাশ শুরু হয়।
আগস্ট ২২
ইরাকের দিয়ালা রাজ্যের এক সুন্নি মসজিদে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় শিয়া জঙ্গিরা এবং ৭০ জনকে হত্যা করে।
সেপ্টেম্বর ২৩
সিরিয়াতেও সম্প্রসারিত হয় আইএসবিরোধী বিমান হামলা।
অক্টোবর ২৫
রাজধানী বাগদাদের কাছে অবস্থিত জুর্ফ আল শেখর এলাকা আইএসের নিয়ন্ত্রণ থেকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে আইএসের বিরুদ্ধে ইরাক সরকারের প্রথম বিজয় ঘোষণা করেন আবাদি।
অক্টোবর ২৯
আলবু নিমর উপজাতির প্রায় একশ’ মানুষকে হত্যা করে আইএস এবং এরপর থেকেই মূলত ধারাবাহিক গণহত্যা শুরু করে সংগঠনটি।
নভেম্বর ১৪
ইরাকের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাইজি শহর আইএসের নিয়ন্ত্রণ থেকে পুনরুদ্ধার করে ইরাকি বাহিনী এবং এর পরপরই আবারও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও ফেলে। সরকারি বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করে আবারও শহরটি দখলে নেয় আইএস।
জানুয়ারি ২৫, ২০১৫
দিয়ালা প্রদেশে ৭০ জনেরও বেশি বাসিন্দাকে হত্যার জন্য শিয়া জঙ্গিদের দায়ী করে দেশটির সুন্নি নেতারা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা।
জানুয়ারি ২৬
দিয়ালা প্রদেশ আইএসের হাত থেকে ‘মুক্ত’ হয়েছে বলে ঘোষণা দেন স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুলামির আল-জাইদি।
ফেব্রুয়ারি ৩
জর্ডানের নাগরিক এক বিমানচালক মাজ আল-কাসাবেহকে খাঁচার ভেতরে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার ভিডিও প্রকাশ করে আইএস। এর আগে ডিসেম্বর মাসে সিরিয়া থেকে ওই বিমানচালককে অপহরণ করেছিল আইএস জঙ্গিরা।
ফেব্রুয়ারি ২৬
মসুলের একটি জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রাচীন অমূল্য শৈল্পিক নিদর্শন ধ্বংস করার ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
মার্চ ২
আইএসের নিয়ন্ত্রণ থেকে তিকরিতকে পুনরুদ্ধারে বিশাল পরিসরে অভিযান শুরু করে ইরাক সরকার।
মার্চ ৫
ইরাকের প্রাচীন অ্যাসিরীয় আমলের শহর নিমরুদ ‘পিষে ফেলেছে’ আইএস, ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার। পরে শহরটির প্রাচীন শৈল্পিক নিদর্শনগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলে জায়গাগুলো বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার ভিডিও-ও প্রকাশ করে আইএস।
মার্চ ৩১
তিকরিত পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দেন আবাদি। কিন্তু ইরাক সরকারের এ বিজয় কয়েকশ’ বাড়িঘর ও দোকানে লুটপাট চালানো ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ধুলায় ধূলিস্যাৎ করে দেয় খোদ সরকার সমর্থিত বাহিনীর সদস্যরাই।
এপ্রিল ৫
আরেক প্রাচীন শহর হাতরার শিল্পকলা ধ্বংসের ভিডিও প্রকাশ করে আইএস। শহরটি ইউনেস্কো ঘোষিত ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ ছিল।
মে ১৭
ইরাকের আনবার প্রদেশের রাজধানী রামাদি দখল করে নেয় আইএস। একইসঙ্গে রামাদির সীমান্তবর্তী সিরিয়ার প্রাচীন শহর পালমিরাও দখল করে নেয় সংগঠনটির জঙ্গিরা। ইরাকের তিকরিত-রামাদি-মসুল ও সিরিয়ার পালমিরা দখলের মাধ্যমে ইরাক ও সিরিয়ার অর্ধেক অংশই দখল করে নিয়েছে আইএস এবং সংগঠনটির এক বছর পূর্তিতে এটিকে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিজয় হিসেবে ঘোষণাও করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.