আদালত অবমাননার অভিযোগে এক ঘণ্টার দণ্ড ভোগ করলেন জাফরুল্লাহ

আদালত অবমাননার দায়ে এক ঘণ্টা কারাদণ্ড ভোগ করলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল তাকে এ দণ্ড দেয়। একই সঙ্গে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে একমাস কারাদণ্ড ভোগের কথা বলা হয়েছে আদেশে। একই অভিযোগে আরও ২২ জনকে সতর্ক করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-২ এই আদেশ দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী শুরুতে কাঠগড়ায় উঠতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আদেশের কপি দেখার পর তিনি কাঠগড়ায় ওঠেন। দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে তিনি ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উঠেন। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে তিনি নেমে আসেন। তবে, রায় কার্যকরের পর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, জরিমানার টাকা তিনি পরিশোধ করবেন না। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তিনি। ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ে মন্তব্য করার মাধ্যমে আদালত অবমাননা হয়েছে এমন অভিযোগে বাংলাদেশে বসবাসরত বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গত বছরের ২রা ডিসেম্বর ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২। তাকে ওইদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত এজলাস কক্ষে বসে থাকার আদেশ দেয়া হয়। বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ জানিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকায় বিবৃতি দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ৪৯ জন। বিবৃতি প্রদান করায় এতে আদালত অবমাননা হয়েছে মর্মে ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ২৬ জন নিঃশর্ত ক্ষমতা চাওয়ায় তাদের ক্ষমা করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি ২৩ জনকে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১লা এপ্রিল রুল জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল রায় ঘোষণার মাধ্যমে রুলের নিষ্পত্তি করা হলো। ট্রাইব্যুনালের আদেশে অব্যাহতি পাওয়া ২২ জন হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নারী অধিকারকর্মী শিরিন হক, নৃ-বিজ্ঞান গবেষক রেহনুমা আহমেদ, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সি আর আবরার, সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মরিয়াম, অধিকারকর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, সাংবাদিক ও লেখক আফসান চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক বীণা ডি কস্টা, লেখক শবনম নাদিয়া, লেখক মাহমুদ রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ এ্যানি, আলাল ও দুলাল ব্লগের সম্পাদক তীব্র আলী, নৃবিজ্ঞানী দেলোয়ার হোসেন, মাসুদ খান, অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান, জরিনা নাহার কবির, আলী আহম্মেদ জিয়াউদ্দিন, সংগীতশিল্পী আনুশেহ আনাদিল, অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ ও সাংস্কৃতিক কর্মী লিসা গাজী। সংক্ষিপ্ত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ২২ বিবৃতিদাতার বিবৃতি আদালত অবমাননা হলেও প্রথমবার বিবেচনায় তাদের সতর্ক করে ক্ষমা করা হলো। তবে, জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এর আগেও আদালত অবমাননার দায়ে সতর্ক করা হয়েছিল। তাই তাকে এ সাজা দেয়া হলো।
রায় কার্যকরের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সমালোচনা নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতান্ত্রিক দেশে কি আমি কথা বলতে পারবো না? এই দেশের জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। সেই দেশের কোন ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে পারবো না তাতো হয় না।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে অব্যাহতি পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন অভিযোগ করেন, কাঠগড়ায় ওঠাতে পুলিশ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে জোরাজুরি করে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। তিনি বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার সঙ্গে পুলিশ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। তার প্রতি এরকম আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ। আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু মুক্ত মতপ্রকাশ ও মুক্তচিন্তার স্বাধীনতাও থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.