নাগঞ্জে রহস্যময় ব্যক্তি জয়নাল আবেদীন by রাজু আহমেদ

এককালে ফুটপাতে বসে হোসিয়ারি মালামাল বিক্রি করতেন তিনি। কাজ করেছেন বন্দর এলাকায় রিকশা গ্যারেজেও। সেই সাধারণ জয়নাল হঠাৎ করেই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে হয়ে যান জয়নাল আবেদীন ওরফে আল জয়নাল। শহরের বুকে সুবিশাল অট্টালিকা আল জয়নাল প্লাজা গড়ে হয়ে উঠেন বিশিষ্ট শিল্পপতি। একজন হকার থেকে শিল্পপতি হয়ে উঠা জয়নালকে নিয়ে গত এক দশকে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কখনও জঙ্গি কানেকশন, জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মামলার আসামি, কখনও হেফাজতের পৃষ্ঠপোষক, কখনও কেন্দ্রীয় তাঁতী লীগের নেতা, এমন অনেক কথাই হয় এই রহস্যময় পুরুষটিকে ঘিরে।
কয়েক মাস আগে চাষাড়া এলাকায় রাজউকের জমি দখল করে বহুতল মার্কেট নির্মাণের অভিযোগে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছিল রাজউকের একটি উচ্চপর্যায়ের টিম। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ওই ঘটনার পরদিন থেকেই জয়নাল আবারও নির্মাণকাজ শুরু করে এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি নিজ বাসা থেকে ৪ পুলিশ কর্মকর্তার সামনে ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়ে পালিয়ে যাওয়া এবং ওই মামলায় সকালে কারাগারে গিয়েও আবার বিকালে বাসায় এসে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন তিনি। আশ্চর্য হলেও ঘটনা সত্য।
অসাধ্য এ কঠিন কাজকে সাধন করার ঘটনা নারায়ণগঞ্জে টক অব দ্য টাউনে পরিনত হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার জমিসংক্রান্ত একটি মামলায় জয়নালকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। যে মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম শফিকুল ইসলামের আদালতে স্বশরীরে জয়নাল আবেদীন হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে বিকালে ‘সমঝোতায়’ তিনি ছাড়া পেয়েছেন। বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জের আদালত জয়নালকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিলেও কোর্ট পুলিশ তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে ‘সমঝোতার’ জন্য আদালতের গারদে রেখে দেয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত। অবশেষে বিকালে বাদীর সঙ্গে আপস ও সমঝোতার ভিত্তিতে বাদী অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের জিম্মায় জামিন পান জয়নাল আবেদীন।
ওই দিন আদালত পাড়ায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করছেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতা। জমিসংক্রান্ত মামলা ছাড়াও ফেরদৌসের ছোট ভাইয়ের ওপর হামলা ও চোখে আঘাত করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও দায়ের করা মামলায় জয়নালকে সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ওই মামলায় জয়নাল হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করলেও জয়নাল আবেদীন নিজেকে কেন্দ্রীয় তাঁতী লীগের সহসভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেন, ‘শুনানিতে আপস-মীমাংসার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী শুনানির দিন পর্যন্ত আল জয়নালকে আমার জিম্মায় জামিন দেয়া হয়েছে।’ এ ব্যাপারে জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

No comments

Powered by Blogger.