ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ

ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটছে একের পর এক ঘটনা। সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুর ও কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন ৩ জন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় ছাত্র-শিক্ষকসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একের পর এক ঘটনায় বিব্রত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হলেও গ্রুপিং এর কারণে কিছুতেই সংঘাত সংঘর্ষ থামছে না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এই ঘটনার ঘটেছে। আমরা দ্রুত দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রয়োজনে সংগঠনের পক্ষ থেকেও করা হবে।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ই এপ্রিল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বন্ধ হয়ে গেছে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ। গেল সপ্তাহ কুমিল্লায় জেলা ছাত্রলীগের কর্মীসভায় দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগ সভাপতি এম. সাইফুল ইসলাম চিকিৎসধীন অবস্থায় মারা যান। গত শনিবার নগরীর টাউন হল মিলনায়তনে ছাত্রলীগের এ কর্মীসভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের উপস্থিতিতে এ সংঘর্ষে জড়ায় দুটি গ্রুপ।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) একজন শিক্ষককে ক্যাম্পাসে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডকে নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে তাকে পেটানো হয়। গতকাল ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে ছাত্রলীগ সমর্থিত এক কর্মী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক সমিতি ও ছাত্রলীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে এক সপ্তাহ ধরে অচল রয়েছে বুয়েট ক্যাম্পাস।  এদিকে পহেলা বৈশাখে ছাত্রলীগের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে রেহায় পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে নারীরা। জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার দায়ে ৬ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে সংগঠন থেকে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পাশে (গোল চিহ্নত)
পয়লা বৈশাখে যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা
নিশাত ইমতিয়াজ বিজয়।
পহেলা বৈশাখে এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ৫ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃতরা হলেন- জাবি ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য নিশাত ইমতিয়াজ বিজয়, শহীদ সালাম বরকত হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নাফিস ইমতিয়াজ, ছাত্রলীগ কর্মী আবদুর রহমান ইফতি, রাকিব হাসান ও নুরুল কবির। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় হলে ফেরার পথে তাদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এই সময় তার মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তার শাড়ি ধরে টান দেয় ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটে এক ছাত্রদল নেতাকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। শহীদ রফিক জব্বার হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আশরাফুলকে বেধড়ক পেটায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে ১০-১২ জন।  
এদিকে ছিনতাই এর অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন এবং এহসানুল হক। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা এক বিবৃতিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় ছাত্রলীগের নামে অন্তত ১৫ জন ক্যাডার নানা অপকর্ম করে আসছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিতাড়িত সভাপতি ইফতেখারুল ইসলাম ও বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক অরুণ কান্তি রায়ের অনুগত বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.