সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কূটনীতিকরা

সিটি নির্বাচনে নিবিড় পর্যবেক্ষণ থাকছে কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগী বিদেশী বন্ধুদের। ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরজমিন মাঠে যাবেন তারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র,  সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনসহ পর্যবেক্ষণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ঢাকায় দূতাবাস বা অফিস রয়েছে এমন রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রতিনিধিরা বিদেশী ও লোকাল স্টাফের সমন্বয়ে ভোট মনিটরিংয়ে নিজস্ব সেল খুলেছেন। ওই সেল থেকেই তারা সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে বিবিসি গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছে ৩ সিটি নির্বাচনে শতাধিক বিদেশী পর্যবেক্ষক নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধিতদের প্রত্যেকের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ‘পর্যবেক্ষক কার্ড’ এবং তাদের বহনে প্রয়োজনীয় ‘ভেহিক্যাল পাস’ ইস্যু করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ৫ই জানুয়ারির এক তরফা নির্বাচনের পর ঢাকায় অনেক রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের অনেকেই বাংলাদেশে আগে দায়িত্ব পালন করেননি। এখানকার নির্বাচন প্রক্রিয়া সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি তাদের। সঙ্গত কারণেই প্রথম অভিজ্ঞতা অর্জনের এ সুযোগকে তারা হাতছাড়া করতে চাইছেন না। অনেক দূত বিশেষ করে পশ্চিমা প্রভাবশালী কয়েক জন দূত সরজমিন ভোট পর্যবেক্ষণের আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাদের আগ্রহের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে নিরাপত্তাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে কোন দূত কখন কোথায় যাবেন নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার কিংবা দূতাবাস সেটি প্রকাশ করছে না। দূতাবাসগুলোর প্রেস উইং বলেছে, আজ দিনের শুরুতে তাৎক্ষণিক সেটি জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলোর দাবি বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক ঢাকায় থাকলেও চট্টগ্রাম পরিস্থিতির ওপর বিশেষ নজর থাকছে বিদেশীদের। সীমিত সংখ্যক বিদেশী এরই মধ্যে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কেবল বাংলাদেশেই নয়, ওয়াশিংটন থেকেও আজকের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে আগাম ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩ সিটি নির্বাচনের ফলও বিশ্লেষণ করবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। সমপ্রতি ওয়াশিংটনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মেরি হার্ফ। সেখানে তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি যে, আমার দলকে নিয়ে বাংলাদেশের সিটি নির্বচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবো। কিছু বিশ্লেষণও করতে পারবো। ঢাকায় নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস বুম বার্নিকাট সমপ্রতি এক টুইট বার্তায় বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা করেছেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। আশা করি এই চেতনার একটি নমুনা হবে মঙ্গলবারের নির্বাচন। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিনস ‘স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে আগ্রহী। প্রি-ইলেকশন বিষয়ক এক বিবৃতিতে সমপ্রতি তিনি এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি জোর তাগিদ দেন। ঢাকার সমন্বয়কারীর বিবৃতির আগে আগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও বাংলাদেশে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আবেদন জানান। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)’র তরফেও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান জানানো হয়েছে। ঢাকাস্থ ইইউ ডেলিগেশনের কার্যালয় সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা ভোটের দিনে বের হবেন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে ইইউ ঘোষণা বিরত থাকলেও এবার গুরুত্ব দিয়েই ওই সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে সংস্থাটি। এদিকে ইইউ জোটের অন্যতম সদস্য যুক্তরাজ্য জোটবদ্ধ এবং স্বতন্ত্রভাবে আজকের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। পর্যবেক্ষণ টিমে থাকা বৃটিশ হাইকমিশনের এক সদস্য গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, ২০-২২ জনের সমন্বয়ে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। তারা সবাই ভোটের দিনে বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবেন। বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা জ্ঞান আহরণেই এটি করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন দূতাবাস ছাড়াও মার্কিন সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি পর্যবেক্ষণের অনুমতি পেয়েছে। শেষ সময় পর্যন্ত এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আগাম জানিয়ে দিলেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান আরজু।

No comments

Powered by Blogger.