দুই শিবিরে দুই চিত্র

শুরু হয়েছে সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। গতকাল থেকে সীমিত আকারে প্রচারের সুযোগ এলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা প্রথম দিন থেকেই মাঠে নেমেছেন ঘটা করে। ব্যাপক শোডাউন দিয়ে প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। অন্যদিকে বিরোধী জোট সমর্থিত প্রার্থীদের কারও দেখা মেলেনি মাঠে। প্রথম দিনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেউ প্রচারণায় নামেননি। গতকাল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। প্রচারণা ঘিরে দুই রাজনৈতিক শিবিরে লক্ষ্য করা গেছে দুই রকম রূপ। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সীমিত আকারে প্রচারণা শুরু হয়েছে। ঢাকার দুই সিটিতে সকাল থেকে মাঠে নামেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ায় নেতাকর্মীদের নিয়ে তারা প্রচারণা শুরু করেছেন। অন্যদিকে মাঠে নামেনি বিএনপি। তফসিল অনুসারে আগামী ২৮শে এপ্রিল ভোট গ্রহণ হবে। সাধারণত প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারেন না। তবে ভোট গ্রহণের ২১ দিন আগে সীমিত আকারে প্রচারণা চালাতে পারেন। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেন ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনিসুল হক। সকালে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় তিনি মোনাজাতেও অংশ নেন। সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, এমপি তারানা হালিমসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। সাভার থেকে ফিরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এরপর তিনি মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে আনিসুল হকের প্রচার কর্মসূচি শুরু হয়। সেখানে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে গণসংযোগের পাশাপাশি তিনি আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। আনিসুল হক বলেন, অতিরিক্ত জনবসতির কারণে ঢাকা শহরে সমস্যার শেষ নেই। তবে সুযোগ পেলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাসযোগ্য ঢাকা শহর গড়ে তোলার কাজ শুরু করতে চান। এদিকে বেলা ১১টায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী প্রবেশমুখে পথসভা করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন সাঈদ খোকন। সেখানে সমবেতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটা মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে এ সেবা ঝিমিয়ে পড়েছে। এ কারণে মানুষকে নানা বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে। আমি যদি আপনাদের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হতে পারি তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে আবার সেবা সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলবো। ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের কথা স্মরণ করে তার ছেলে খোকন বলেন, আমার বাবা মানুষের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। আমিও মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করবো। হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করার কারণও ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এ ফ্লাইওভার আমার বাবার আত্মত্যাগেরও সাক্ষী হয়ে আছে। এখান থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে আমি বলতে চাই- ঢাকাবাসী আসুন, উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত হন। আমি আমার পিতার আদর্শের অনুসারী হিসেবে ঢাকার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আপনারা এখানে যারা আছেন, তারা ঢাকাবাসীর কাছে আমার জন্য ভোট চাইবেন। মেয়র নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনে নাগরিক সেবা পেতে বিড়ম্বনার অবসান করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। টোল কাউন্টারের পাশে সাঈদ খোকনের প্রচারণা শুরুর এ আনুষ্ঠানিকতার সময় ফ্লাইওভার থেকে গাড়ি বেরোনো কিছুক্ষণের জন্য আটকে যায়। পরে ফ্লাইওভারের বাইরের ফটকের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন সাঈদ খোকন ও তার সঙ্গীরা। সেখানেও কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি আটকে যায়। পরে ফ্লাইওভারের পশ্চিমপাশে চানখাঁরপুলে এসে প্রচারণা চালান খোকন। ফ্লাইওভারে টোল প্লাজায় আলাদা আলাদা না এক সঙ্গে টোল দেয়া হবে তা নিয়ে সাঈদ খোকনের কর্মীদের সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীদের বচসা হয়। এরপর বিকালে নিজের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করেন সাঈদ খোকন। রাজধানীর ২৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে মিলাদ অনুষ্ঠানের পর গতকাল বিকালে অফিসটির কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার, সদস্য সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
এদিকে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ কোন সিটিতেই গতকাল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে কোন প্রচারণা দেখা যায়নি। দক্ষিণে দলের প্রার্থী হিসেবে মির্জা আব্বাস চূড়ান্ত হলেও তিনি একাধিক মামলার আসামি। মির্জা আব্বাস বা তার সমর্থকদের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে ৯ই এপ্রিল থেকে মির্জা আব্বাস প্রকাশ্যে আসতে পারেন বলে জানা গেছে। ওদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রার্থী নিয়ে জটিলতায় পড়েছে দলটি। অন্য কাউকেও বিএনপির পক্ষ থেকে সমর্থন দেয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.