মাত্রাছাড়া ফেসবুকিংয়ের বিপত্তি

বেশি সময় ধরে ফেসবুক ব্যবহারে বিষণ্নতা বাড়ে
যত বেশি ফেসবুক ব্যবহার করবেন মানসিকভাবে তত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। দেখা দেবে বিরক্তি, এমনকি বিষণ্নতাও পেয়ে বসবে। কমে যাবে ভবিষ্যতের উন্নতির আশা। সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফল এমনটিই বলছে।
বেশি সময় ধরে ফেসবুক ব্যবহার করলে কী ধরনের সমস্যা হয় তা নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন মার্কিন গবেষকেরা। ফেসবুক ব্যবহারের সময়ের তুলনা করে গবেষকেরা দাবি করেছেন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটটি বেশি সময় ধরে ব্যবহার করলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার প্রভাব পড়ে। হাউসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছেন, বেশিক্ষণ ধরে ফেসবুক ব্যবহার করায় বিষণ্নতা বাড়ে।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, নতুন ও পুরোনো বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগের কার্যকর মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক। কিন্তু অনেকেই ফেসবুক নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটান। ফেসবুকে বন্ধুদের জীবনের ঘটনা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করেন এবং নিজের জীবনের সঙ্গে মেলাতে থাকেন। এতে তাঁর মধ্যে বিষণ্নতা বাড়তে থাকে।
সোশ্যাল অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা সংক্রান্ত এই প্রবন্ধ।
গবেষণা প্রসঙ্গে হাউসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও গবেষণা প্রবন্ধের লেখক মাই-লি স্টিয়ারস জানিয়েছেন, ‘ফেসবুকে মানুষ নিজেকে জাহির করার প্রবণতা দেখায়, এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে মানুষ খারাপ ঘটনার চেয়ে ফেসবুকে তার ভালো ভালো ঘটনা বেশি শেয়ার করে। আমরা এটা যদি বুঝতে না পারি এবং অন্যের জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনের তুলনা করতে থাকি তবে ফেসবুকের বন্ধুদের ঠিকভাবে মাপা যাবে না।’
১৮ থেকে ৪২ বছর বয়সী প্রতিদিন ফেসবুক ব্যবহার করেন এমন ১৫৪ জন ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা চালান স্টিয়ারস ও তাঁর গবেষক দল।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, যাঁরা দীর্ঘসময় ধরে ফেসবুক ব্যবহার করেছেন তাঁদের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা যায়। এসব লক্ষণের মধ্যে রয়েছে উন্নত ভবিষ্যতের জন্য হতাশা, দুঃখ ভাব, পার্থিব জিনিস নিয়ে বিরক্তি।
এর আগেও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহার ও বিষণ্নতার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ২০১০ সালে কানাডার গবেষকেরা এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা করেন যাতে রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে ফেসবুক ঈর্ষা সৃষ্টি করে সে তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৩ সালে জার্মান গবেষকেরা একটি গবেষণা করেন যাতে ফেসবুক ব্যবহারে মানুষের মধ্যে হিংসা বাড়ে বলে গবেষণায় উঠে এসেছিল।
অবশ্য, গবেষকেরা বিষণ্নতার জন্য সরাসরি ফেসবুককে দোষ দেননি। তাঁদের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারের সময় অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা হলে তাতে সমস্যা বাড়ে।
এ ছাড়া ফেসবুক তৈরির বছর ছয়েক আগে ১৯৯৮ সালে কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণায় অনলাইনের ব্যবহার মানুষের মধ্যে বিষণ্নতা বাড়াচ্ছে বলে উঠে এসেছিল। গবেষকেরা বলছেন, গত এক দশক ধরেই সামাজিক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ কমে যাওয়া, সামাজিক পরিমণ্ডলে বন্ধুত্বের সংখ্যা কমে আসার মতো বিষয়গুলো ঘটছে। এ ছাড়া একাকিত্ব ও বিষণ্নতা বাড়াচ্ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার।
গবেষক স্টিয়ারস বলেন, ‘ডিজিটাল জগতে শত শত বন্ধু থাকলেও কিংবা তৎক্ষণাৎ বার্তা আদান-প্রদানের সুযোগ থাকলেও মানুষ একাকী ও দুঃখবোধ করতে থাকে। সামান্য কিছু ছবি দেখে বন্ধুর জীবনের আসল চিত্র বোঝা সম্ভব হয় না।’
গবেষক স্টিয়ারস পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমি মানুষকে ফেসবুক নিয়ে নিজের মূল্যায়ন করতে বলব, আসলেই কী ফেসবুক যোগাযোগ বা মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকতে কাজে লাগছে না কি বিষণ্নতা বাড়িয়ে দিচ্ছে? যদি সত্যি ফেসবুক কাজ না করে তবে তা থেকে দূরে থাকাই ভালো।’

No comments

Powered by Blogger.