লক্ষ্মীপুরে আড়াই মাসে ১৬ লাশ, গুলিবিদ্ধ ২০ by আব্বাছ হোসেন

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ-চাটখিল সড়কের ২ নাম্বর ব্রীজ এলাকায় ১২ ফেব্রুয়ারি
বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে।
এতে চার পুলিশসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। এসময় ঘটনাস্থল
থেকে ১টি এলজি, ১টি পাইপগান ও চারটি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর এখন এক আতঙ্কের জনপদের নাম। বিরোধী জোটের অবরোধের মধ্যে গত আড়াই মাসে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত বন্ধুকযুদ্ধে আহত ও পঙ্গু হয়েছেন ২০ জন। বাস-ট্রাকসহ অন্তত ৯০টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ আর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। নাশকতা ও সহিংসতার অভিযোগে জেলার সদরে ১০টি, রামগতিতে ২টি, কমলনগরে ৮টি, রায়পুরে-৭টি ও চন্দ্রগঞ্জে ৫টিসহ ৬টি থানায় ৩২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী জোটের ৪ শতাধিক নেতাকর্মী। অভিযানের নামে বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা আর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। হামলা-মামলা আর গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
সহকারী পুলিশ সুপার জুনাইদ কাউসার বলেন, যানবাহন চলাচল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি খুনের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভাগবাটোয়ারা ও সন্ত্রাসী বাহিনীর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশির ভাগ খুনের ঘটনা ঘটেছে।
গত ২৩শে জানুয়ারি রাতে লক্ষ্মীপুরের সোলাইমান উদ্দিন জিসান বাহিনীর প্রধান জিসান কুমিল্লার দাউদকান্দিতে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হন। ২৫শে জানুয়ারি রাতে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জের দেওপাড়া এলাকায় নাছির বাহিনীর সহযোগী বাহার উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় সুমন নামে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। ১৯শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোর রাতে সদর উপজেলার বাংগাখাঁ ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাঈন উদ্দিন বাবলুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামের দোলাইখাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ১০ই ফেব্রুয়ারি রাতে দিঘলী ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের যুবলীগ কর্মী বাবর হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২রা মার্চ দুপুরে জেলার কমলনগর উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে জামায়াতকর্মী মাঈন উদ্দিন ও যুবদলকর্মী আরিফ হোসেন নামে দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। পরে ওই দিন দিবাগত রাত ১টায় আটককৃত দুইজনসহ অন্যরা একই উপজেলার চর চরলরেন্স বেরার গোঁজ এলাকায় সড়ক অবরোধ করার সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় বলে দাবি করে পুলিশ। পরে যুবদলকমী আরিফ হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে মারা যায়।
নিহত আরিফের বড় ভাই মো. খোকন জানান, ঘটনার দিন দুপুরে কমলনগরের হাফেজিয়া মাদরাসা এলাকায় কে বা করা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। দুপুর ২টার দিকে পুলিশ তার ভাই আরিফকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। একই সময় পুকুরে গোসল করার সময় তার খালুর ভাই প্রবাসী মাঈন উদ্দিনকেও পুলিশ তোলে নেয়। পরে রাতে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে পুলিশ তাদের পায়ে গুলি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরিফ হোসেন মারা যায়। তারা কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ৩রা মার্চ ভোররাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৪নং ওর্য়াডের যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিহতের বড় ভাই বাহার উদ্দিন জানান, রাতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা রুবেল হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রাতের যে কোন সময়ে জবাই করে হত্যা করে। ৪ঠা মার্চ মিরিকপুর বাজারের বাবুল মিয়ার স-মিলের ভিতরে বাংগাখাঁ ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আরিফুর রহমান ফরাদকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিহত আরিফুর রহমান ফরাদ সদর উপজেলার বাংগাখাঁ ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ও ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৫ই মার্চ চন্দ্রগঞ্জ থানার ভৈরবনগর এলাকা থেকে নাছির বাহিনীর সহযোগী রতনের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৭ই মার্চ বশিকপুর ইউনিয়নের বালাইশপুর গ্রামে বিএনপিকর্মী সোহেল রানাকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ৮ই মার্চ উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের হাসন্দি এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে মো. দুলাল হোসেন নামে এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১২ই মার্চ সদর উপজেলার কাশিপুর এলাকায় সন্ত্রাসী-পুলিশ গোলাগুলিতে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ ৫ জন আহত হয়। একই উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা অপহৃত ইস্রাফিলের লাশ লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জের-নোয়াখালী চাটখিলের সীমান্তবর্তী এলাকার দক্ষিণ দিলিয়াই বাজারের পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ২০শে মার্চ শেরপুর এলাকায় একটি বাগানে সুপারিগাছের সঙ্গে বেঁধে আওয়ামী লীগকর্মী গোলাম মাওলাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

No comments

Powered by Blogger.