জয়ের সাথে অর্জন অনেক by মাসউদুর রহমান

ওপেনার তামিম ইকবাল ৯৫ রানের একটি দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন
স্যাক্সটন ওভালের প্রতিনিয়ত আপডেট হতে থাকা নতুন স্টেডিয়ামের অপর্যাপ্ত সুবিধার গ্যালারিতে তুলনামূলক অনেক শিশুর উপস্থিতি দৃষ্টি কেড়েছে। এদের বেশির ভাগই সমর্থন করে গিয়েছিল বাংলাদেশ দলকেই। বাংলাদেশীদের পতাকা নিয়ে মিছিল, ‘গো-টাইগার গো, বাংলাদেশ এগিয়ে যাও’ এমন অনেক বাংলা স্লোগানের সাথে সুর মেলাচ্ছিল শিশুরাও। হৈ হুল্লোড়, স্লোগান, মিছিল তাদের আকর্ষণ করেছিল বলেই তারা এসে যোগ দেয় বাংলাদেশ দলের সাপোর্টে। শ’চারেক বাংলাদেশীদের সাথে মিলেমিশে সারাক্ষণই সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া শিশুরাও বোধহয় তৃপ্ত। সে তৃপ্তির সাথে মিলেমিশে একাকার গোটা বাংলাদেশও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর ৩১৮ রানের বিশাল টার্গেট চেজ করে যে সহজে জিতেছেন ম্যাচ, তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ আরো একটা। পরের ম্যাচটা তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সে ম্যাচের আগে দুর্দান্ত ব্যাটিং ও আত্মবিশ্বাসটা ফেরানো গেছে। তিন শতাধিক রানের চ্যালেঞ্জে। ভয় তো থাকবেই! মাশরাফিও স্বীকার করেছেন। কিন্তু ভয় থাকলে সেটা তো তাড়ানোও যায়। স্যাক্সটন ওভালে সেই ভয়টা তাড়িয়েই সহজ জয় পেল কাল বাংলাদেশ ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে। অ্যাডিলেডে যাওয়ার আগের ওই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অর্জনের ভাণ্ডারে জমা পড়েছে বেশ কিছু রেকর্ডও। বিশ্বকাপের রান চেজ করে জয়ের রেকর্ড আয়ারল্যান্ডের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৯ করে জিতেছিল তারা। বাংলাদেশ কাল ৩২২ করে উঠে এলো দ্বিতীয় স্থানে। বাংলাদেশের রেকর্ডও ওটা। এর আগে ’০৯-এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩১৩ করে জিতে রেকর্ড করেছিল। আর বিশ্বকাপে সেটা ছিল ২২৭, যা করেছিলেন গত বিশ্বকাপে তারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। ফলে এটাকে রেকর্ডের ম্যাচ বললে বোধহয় ভুল হবে না। কারণ এ মাচে রেকর্ড তো আরো আছে। সৌম্য সরকারও করেছেন ক্যাচ ধরার রেকর্ড। ভারতের মোহাম্মাদ কাইফ এ পর্যন্ত এক ম্যাচে সর্বোচ্চ চার ক্যাচ লুফে নিয়ে যে রেকর্ড গড়েছেন, সৌম্য সরকার চার ক্যাচ নিয়ে ভাগ বসিয়েছেন তাতে। তামিমও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের একক সর্বোচ্চ মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৭ টপকে ৯৫তে গিয়ে আউট হয়েছেন। সেঞ্চুরি পাওয়ারই কথা তার। কিন্তু আউট হয়ে গেলেন নার্ভাস নাইন্টির ঘরে গিয়ে। অবশ্য তামিম নার্ভাস ছিলেন না ওই সময়ে। প্রতিপক্ষদের রান করা দেখে তেতেই ছিলেন। কাক্সিত সেঞ্চুরিটা লাভের জন্যই খেলছিলেন। কিন্তু পাঁচ রানের জন্য স্বপ্নটা পূরণ হয়নি। লেগবিফোর হয়ে যান তিনি সহজ খেলা খেলতে গিয়েই। তৃপ্তি যেমন ছিল এ ম্যাচে, রয়েছে বেদনাও। স্কটল্যান্ডের ৩১তম ওভারে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ডান কাঁধের এসি জয়েন্ট ডিসেøস হয়ে যায় এনামুল হক বিজয়ের। এত বিশাল টার্গেট চেজ করতে গিয়ে যদিও তামিমের ওপেনিং পার্টনারই না থাকে, তাহলে? কিন্তু তামিম সব দাায়িত্বটা কাঁধে তুলেই যেন শুভসূচনা করলেন ম্যাচে। তাও দ্বিতীয় ওভারেই যখন আউট হয়ে গিয়েছিলেন সৌম্য সরকার ২ রান করে। ম্যাচে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পার্টনারশিপটাই উপহার দিয়েছেন তামিম ও মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৯ রানের ছিল সেটা। মূলত দুই ব্যাটসম্যানের চান্সলেস ওই পার্টনারশিপের ওপর ভর করেই ভয় তাড়ানো সম্ভব হয়েছে। রিয়াদ যেভাবে খেলছিলেন একটি সেঞ্চুরি প্রাপ্য ছিল তারও। কিন্তু দুর্ভাগ্যই। ওয়ার্ডলর বল লেগ সাইডে খেলতে গেলে নিজের পায়ে লেগে বোল্ড হয়ে যান। ৬২ বলে চমৎকার ৬২ করেছিলেন তিনি অনেকটা ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং করে। রিয়াদের পর মুশফিকও ছিলেন নির্ভার। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৭ রান সংগ্রহ করে মূলত আউট হয়েছিলেন তামিম। ততক্ষণে দলের রান চলে যায় ২০১তে। তামিমও বোল্ড হওয়ার চান্স থেকে বেঁচে গেলেও আম্পায়ার লেগ বিফোরের সিদ্ধান্ত দেন। একটি ছক্কা ও ৯টি বাউন্ডারি ছিল তার ইনিংসে। পরে দলীয় রানটা ওই পর্যায়ে এগিয়ে দেয়ার ফলে সেখানে দাঁড়িয়ে সাকিব রুম্মনকে নিয়ে ম্যাচটা নিয়ে যায় জয়ের লক্ষ্যে। এর আগে সাকিব মুশফিকের সাথেও খেলেন দায়িত্বপূর্ণ একটা ইনিংস। বড় স্কোর গড়ার সুযোগ ছিল মুশফিকেরও। কিন্তু দ্রুত রান করার তাগিদে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী মুশফিক বিগ শট নিতে গিয়ে ক্যাচ দেন লং অনে। দলের রান তখন ২৪৭। কাল চমৎকার খেলেন রুম্মনও। সাকিবের সাথে ঠাণ্ডা মাথায় অপরাজিত জুটির এক ইনিংস খেলে দলকে ১১ বল হাতে রেখেই পৌঁছে দেন জয়ের মার্কে। সাকিব শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয়সূচক রান ও তার হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। আর রুম্মন অপরাজিত ছিলেন ৪২-এ।
এর আগে টসে জিতে স্কটল্যান্ডকে প্রথম ব্যাটিং দিয়ে সমালোচনার মধ্যেই পড়ে মাশরাফি। সূচনায় ম্যাকলেওডকে আউট করলেও সুবিধা করতে পারছিল না বাংলাদেশ দলের বোলিং। অনেকটাই অগোছালো বোলিং হলেও দ্বিতীয় ওভারেই সাকিবকে এনে স্কটিশদের প্লান নড়বড় চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। কোয়েটজারের দুর্দান্ত ব্যাটিং স্কটিশদের নিয়ে যায় ওই বিশাল মার্কে। কোয়েজার ১০৩ বলে সেঞ্চুরি করেন, যা কোনো স্কটিশ ব্যাটসম্যানের বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি। পরে বিশ্বকাপে নন টেস্টপ্লেয়িং কোনো দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যেও সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে নাম লেখান তিনি। কারণ এর আগে ’৮৭-এ তখনকার নন টেস্টপ্লেয়িং জিম্বাবুয়ের ডেডিভ হাউটন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪২ করেছিলেন। কাল সেটা টপকে গেলেন কোয়েটজার। তার রান ১৫৬। ১৩৪ বলে চারটি ছক্কা ও ১৭টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ওই রান করেন তিনি। এ ছাড়া অধিনায়ক মমসেনের ৩৯ রান সর্বোচ্চ। ম্যাচে হারলেও কোয়েজারই পান ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। বল হাতে তাসকিন তিনটি এ ছাড়া নাসির দু’টি ও সাকিব, রুম্মন, মাশরাফি নিয়েছিলেন একটি করে উইকেট। পরের খেলা ৯ মার্চ অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে জয় পেলে নিশ্চিত হয়ে যাবে কোয়ার্টার। নতুবা অপেক্ষা করতে হবে শেষ ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের।

No comments

Powered by Blogger.