এটি কোনো সুস্থ রাজনীতি নয়

বিরোধী দলের সমাবেশ ঘিরে আবার ‘সরকারি’ অবরোধের কবলে পড়েছে দেশ ও রাজধানী ঢাকা। রোববার দুপুর থেকে দেশের কোথাও থেকে আসছে না ঢাকামুখী যানবাহন। যদিও বলা হচ্ছে, পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরাই নিরাপত্তার স্বার্থে যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন, তবে নানাভাবে তাতে সরকারযন্ত্রের ভূমিকার কথা জানা যাচ্ছে।   আমরা এর আগেও কয়েকবার এ রকমটি দেখেছি। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের  ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ঠেকাতে দুই দিন আগে থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলো আটকে দেয়া হয়েছিল। তার আগে ফেব্রুয়ারি মাসেও আরো একবার একই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়ে সাধারণ মানুষ। দেশজুড়ে সড়ক, নৌ ও রেলপথের যাতে বিরোধী দলের সমর্থকরা ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল সেসবের চলাচল।   বিরোধী দল সমাবেশের ডাক দেবে আর সরকার সব বন্ধ করে দেবে, এটা কোনো সুস্থ রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে না। বিরোধী দলের জমায়েত মোকাবিলায় এমন পদক্ষেপে সরকার তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক ফায়দা পাচ্ছে বটে, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি, একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহারের দুর্নামের ভাগিদার হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের দাবিদার দলটি। জনমনে গড়ে উঠছে নেতিবাচক ভাবমূর্তি। কয়েক বছর ধরে আমরা বিরোধী দলের মোকাবিলায় সরকারকে অনৈতিক জবরদস্তির আশ্রয় নিতে দেখছি। বিরোধী নেত্রীকে বাসায় আটকে রাখা, সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া, কর্মসূচি ঘোষণাকারী নেতাদের গ্রেফতার করা, নেতাকর্মীদের নামে ডজন-ডজন মামলা দিয়ে হয়রানি করা নৈমিত্তিক বিষয় করে তুলেছে সরকার। এমনকি ঘরের নেশাসক্ত সন্তানকে জোর করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করার মতো নেতাদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করার মতো বিস্ময় জাগানিয়া কাণ্ডও প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে দেশবাসীকে। আমরা মনে করি, সরকারের এসব আচরণ কোনোভাবেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিবাচক রাজনৈতিক প্রত্যয়ের মধ্যে পড়ে না। বরং তাতে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি অবজ্ঞা আর এর পরিণামের পরোয়া না করার মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।   ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর দেশে যতটা রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেটা  হয়নি। সরকারের জন্য বড় সুযোগ ছিল এ সময়ে বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার। কিন্তু তার বদলে সরকারের মধ্যে বিরোধী দলকে ধ্বংস করার, অবজ্ঞা করার এক যুদ্ধংদেহী প্রবণতা ভর করেছে। আখেরে এটা দেশের জন্য এমনকি আওয়ামী লীগের জন্যও ভালো ফল বয়ে আনবে না বলে আমরা মনে করি। সরকারি দল উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু শুধু উন্নয়ন নয়, একটি সরকারের সফলতা নির্ভর করে দেশের নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিশীল পরিবেশ, শান্তি ও সুশাসনের ওপর। বিরোধী দলকে অপদস্থ আর অস্বীকার করে সেটা অর্জন সম্ভব হয় না। আমরা আশা করি,  সরকার সেটা অনুধাবন করবে এবং দেশের স্বার্থে বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা নেবে।

No comments

Powered by Blogger.