জাতীয় প্রেসক্লাবে হামলা

জাতীয় প্রেসক্লাবে  হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের হামলায় সাংবাদিকসহ কমপক্সে ১৫ জন আহত হয়েছেন। সরকার ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী চলাকালে সোমবার বিকেলে এ হামলা হয় এ সময় প্রেসক্লাব চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রেসকাবের বাইরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। সোমবার প্রেসক্লাবে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করে। একদিকে প্রেসকাবের বাইরে সড়কে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগ ও প্রেসক্লাবের ভিতরে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকরা অবস্থান নেয়। অন্যদিকে প্রেসকাব চত্তরে বিএনপিপন্থী সাংবাদিকরা এবং নিচের মিলনায়তনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সমাবেশের আয়োজন করে। এছাড়া প্রেসকাবের ভিআইপি মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য’র উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ত্রাণ ও দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রজন্মলীগের কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। পরে ১০ টা ৫০ মিনিটে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামও তাদের কর্মসূচীতে সংহতি জানান। এছাড়া ১১টার দিকে আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকদের কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে বাইরে আসার সময় কিছু ব্যক্তি শ্লোগান দিয়ে তাকে রাজপথে নামার জন্য পিড়াপীড়ি করতে থাকে। কিন্তু মির্জা ফখরুলসহ পেশাজীবী নেতারা তাদের শান্ত হওয়ার চেষ্টা চালান। পরে মির্জা ফখরুলসহ পেশাজীবী নেতারা প্রেসক্লাবের গেস্ট রুমে অবস্থান নেন। কিন্তু নিচে প্রেসক্লাবের ভেতরের প্রবেশ মুখে দাঁড়িয়ে কিছূ ব্যক্তি শ্লোগান অব্যাহত রাখে। পেশাজীবী নেতাদের আহবানের পরও তারা শ্লোগান দিতে থাকেন। তাদের এ অব্যাহত শ্লোগানে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সাথে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা যোগ দিয়ে প্রেসকাবের গেট টপকিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় তাদের হাতে বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্রসস্ত্র দেখা যায়। আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। সাংবাদিকরা প্রেসকাব চত্তরে মিছিল করে আবার সমাবেশে মিলিত হন। কিন্তু এরমধ্যে প্রজন্মলীগ ও ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে প্রেসকাবে প্রবেশ করে সম্মিলিতভাবে বিএনপিপন্থি সাংবাদিকসহ পেশাজীবীদের উপর হামলা চালায়। তারা লাঠি নিয়ে চারদিকে সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের খুঁজতে থাকে। প্রেসকাবের প্রবেশ মুখ ও মিলনায়তন এলাকায় কয়েকজনকে বেদম মারধর করে তারা।  এ সময় প্রেসকাব চত্তর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তাদের হামলায় সাংবাদিকসহ ১৫ জন কমবেশি আহত হন। হামলার সময় প্রেসকাবের বাইরে ২টি ককটেল বিস্ফোরেণ ঘটে। আইনশৃংখলা বাহিনী সকাল থেকেই প্রেসকাবের চারদিকে অবস্থান নিলেও হামলার সময় তারা নিরব ভুমিকা পালন করে। এদিকে রাজনৈতিক নেতা ও পেশাজীবীদের কেউ কেউ প্রেসকাবে অবস্থান করছেন দাবি করে আওয়ামীপন্থি সাংবাদিকরা প্রেসকাব কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দেন। একপর্যায়ে প্রেসকাব ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের দুটি পক্ষ প্রেসকাবে বৈঠক করেন। তাদের বৈঠকে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিক ছাড়া অন্যদের বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এরপরও আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকরা প্রেসকাব চত্তরে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ অব্যাহত রাখেন। পরে রাত সাড়ে ৬টার দিকে তারা প্রেসকাব কনফারেন্স লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন। অন্যদিকে অনেক রাত পর্যন্ত প্রজন্মলীগের নেতাকর্মীরা প্রেসকাবের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয়।

No comments

Powered by Blogger.