নিরাপত্তার চাদরে মক্কা নগর by ফেরদৌস ফয়সাল

হজ উপলক্ষে মক্কার চারপাশ ঘিরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন মক্কায় ঢুকতে পাসপোর্ট অথবা আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) দেখাতে হয়। পথঘাটে চলছে তল্লাশি। তাই সঙ্গে পরিচয়পত্র রাখতে হয়। জেদ্দা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে গেটের কাছে লেখা ‘নো এনট্রান্স ফর নন মুসলিম’। মক্কায় অমুসলিমরা প্রবেশ করতে পারে না। সব সময় পুলিশ প্রহরা থাকে। মক্কায় প্রবেশমুখে গাড়ি, কাগজপত্র, হজ ভিসা তল্লািশ করা হয়। এগুলো থাকলে প্রবেশের অনুমতি মেলে।
কাবা শরিফের নিরাপত্তার জন্য এর ভেতরে ও বাইরে অসংখ্য ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও নিরাপত্তার যন্ত্রপাতি বসানো আছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য সাদাপোশাকে ও পোশাক পরা পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মসজিদের প্রবেশপথে এবং ভেতরে বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করেন। মসজিদের ভেতর চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও বাইরে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স থাকে।
দিন-রাত অসংখ্য মানুষ কাবা শরিফে তাওয়াফ করছেন। ভিড়ের কারণে কেউ পথ হারালে তাঁকে গন্তব্যে পৌঁছে দেন মক্কার স্থানীয় লোকজন। বাংলাদেশ হজ মিশনের কর্মীরাও হাজিদের সাহায্য করছেন।
চিকিৎসাসেবা: সৌদি আরবে মক্কা, মদিনা, মিনা, মুজদালিফায় হজযাত্রীদের জন্য (অর্থাৎ হজ ভিসা থাকলেই) চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এসব ক্লিনিকে লোকজনের ভিড় থাকলে লাইন ধরতে হয়। নাম, দেশ, বয়স বললেই আরবিতে একজন লিখে নেন। লেখা ফরম নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা বললে চিকিৎসক ওষুধের নাম লিখে ডিসপেনসারিতে দিলে ওষুধ দিয়ে দেয়।
উপমহাদেশের হজযাত্রী: এ বছর ভারত থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৫২টি এজেন্টের মাধ্যমে ৩৬ হাজার মানুষ হজ করতে এসেছেন।
পাকিস্তান থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৬ হাজার ৬৮৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৫২টি এজেন্টের মাধ্যমে ৮৬ হাজার ৬৮৪ মানুষ হজ করতে এসেছেন।
আফগানিস্তান থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৪টি এজেন্টের মাধ্যমে ২০ হাজার মানুষ হজ করতে এসেছেন।
বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এক হাজার ৫০১ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৩৫টি এজেন্টের মাধ্যমে ৯৭ হাজার ১৪৬ মানুষ হজ করতে এসেছেন।
প্রতিদিন হাজিদের ছবি, মৃত হাজির নাম, পরিচয় ও তথ্য হালনাগাদ করা হয় www.hajj.gov.bd এই ঠিকানায়।
ইন্তেকাল হলে: সৌদি আরবে হজ পালন করতে এসে স্বাভাবিক কারণে এ পর্যন্ত ৩০ জন হজযাত্রী মারা গেছেন। হজযাত্রী মারা গেলে মরদেহ দেশে পাঠানো হবে, নাকি সেখানে দাফন করা হবে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে।
হজে আসার আগে প্রত্যেক হজযাত্রী হজে গমনের আবেদনপত্র পূরণ ও স্বাক্ষর করেছেন। সেই আবেদনপত্রে অঙ্গীকার করেছেন, সৌদি আরবে মৃত্যু হলে মরদেহ সেখানেই দাফন করা হবে। কোনো আপত্তি থাকবে না। মক্কায় মারা গেলে মসজিদুল হারামে জানাজা পড়ানো হয়, আর মদিনায় মারা গেলে মসজিদে নবিবতে জানাজা পড়ানো হয়, জেদ্দায় মারা গেলে জেদ্দায় জানাজা পড়া হয়।
মক্কা ও মদিনা দুই জায়গাতেই প্রায় প্রতি ওয়াক্তেই ফরজ নামাজের পর জানাজা হয়। হজযাত্রী এবং সম্ভবত আশপাশের এলাকায় যাঁরা মারা যান, তাঁদের জানাজা এ দুই পবিত্র মসজিদে হয়ে থাকে। কোনো কোনো ওয়াক্তে একাধিক জানাজাও হয়ে থাকে। আমরা তাই ফরজ নামাজের পর সঙ্গে সঙ্গে সুন্নত নামাজ শুরু না করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি জানাজার জন্য।

No comments

Powered by Blogger.