আফগানিস্তানে মতৈক্যের সরকার

আশরাফ ঘানি,আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ
আফগানিস্তানে জাতীয় মতৈক্যের সরকার গঠনে সম্মত হয়েছেন আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ ও আশরাফ ঘানি। গতকাল রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই প্রার্থী। এর মধ্য দিয়ে কয়েক মাস ধরে চলা অচলাবস্থার অবসান হলো। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান জাতীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। পুরো অনুষ্ঠান স্থায়ী হয় প্রায় ১০ মিনিট। অভিনব এই ক্ষমতা ভাগাভাগির পর আফগানিস্তান নতুন এক যুগে প্রবেশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। চুক্তি অনুসারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর একজন আশরাফ ঘানি প্রেসিডেন্ট হবেন। আর প্রধানমন্ত্রী পদমর্যাদার প্রধান নির্বাহী (সিইও) পদে মনোনয়ন দেবেন আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমাদের দুই ভাই আশরাফ ঘানি ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ দেশের মঙ্গলে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে দেশে স্থায়ী শান্তি আসবে।’ গত ১৪ জুন অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে আশরাফ ঘানি ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন বলে প্রাথমিক ফলাফলে জানা যায়। এই ফলাফল প্রকাশের পর ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে আবদুল্লাহর সমর্থকেরা রাস্তায় নামেন। নির্বাচনে আবদুল্লাহ নিজেকে প্রকৃত বিজয়ী বলে দাবি করেন। জুলাইয়ে ভোট গণনা শেষ হলেও আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হয়। দুই প্রার্থীর মধ্যে বৈরী অবসানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আফগানিস্তানে আসেন।
দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর তাঁদের মতপার্থক্য কমে আসে। এরই ফলে গতকাল ক্ষমতা ভাগাভাগির এই চুক্তি হলো। এখন শিগগিরই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণারও প্রস্তুতি চলছে। মতৈক্যের বিষয়ে আবদুল্লাহর মুখপাত্র বলেন, একটি চুক্তির আওতায় আশরাফ ঘানিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিয়েছেন আবদুল্লাহ। চুক্তি অনুযায়ী আবদুল্লাহ মন্ত্রিসভার প্রধান নির্বাহীর (সিইও) পদে মনোনয়ন দেবেন। আশরাফ ঘানির মুখপাত্র ফয়জুল্লাহ জাকি বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে আর কোনো বিরোধ নেই। তারা প্রতিটি বিষয়ে শতভাগ একমত হয়েছে। নতুন আফগান সরকারের একটি মন্ত্রিসভা থাকবে। এর প্রধান হবেন প্রেসিডেন্ট। এখানে থাকবেন একজন সিইও, সঙ্গে তাঁর দুজন সহকারী। সিইওর মর্যাদা প্রধানমন্ত্রীর সমতুল্য। তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। প্রেসিডেন্ট কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলো নেবেন। আর সিইওর নেতৃত্বে দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ করবে মন্ত্রিসভা। কারজাইয়ের উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে যেভাবে সংকট তৈরি হয়েছিল, তাতে আফগানিস্তানে আবার জাতিগত সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। আবদুল্লাহ তাজিক ও হাজারাদের সমর্থনপুষ্ট। আর দেশের সবচেয়ে বড় জাতিগোষ্ঠী পশতুনদের সমর্থন ঘানির প্রতি। আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্টের প্রথম কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর। এর ফলে আফগানিস্তানে অবস্থানরত কয়েক হাজার বিদেশি সেনা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের পরও থাকতে পারবে। কারজাই এই চুক্তি স্বাক্ষর করতে রাজি হননি। তবে ঘানি ও আবদুল্লাহ এই চুক্তি করতে রাজি।

No comments

Powered by Blogger.