মোদির রাজ্য দিয়ে সফর শুরু শি জিনপিংয়ের

আহমেদাবাদের একটি হোটেলে গতকাল বিকেলে চীনের
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে স্বাগত জানান ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৬৪তম জন্মদিনে তাঁর রাজ্য গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদ থেকে তিন দিনের ভারত সফর শুরু করলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গতকাল বুধবার বিকেলে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন সস্ত্রীক প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁদের স্বাগত জানান হোটেলে। চীনা প্রেসিডেন্টকে আজ রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হবে। ২০০৬ সালের পর এই প্রথম কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট ভারতে এলেন।
তা ছাড়া এই প্রথম কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান রাজধানী দিল্লির বদলে দেশের অন্য কোনো শহরে অবতরণ করলেন এবং প্রধানমন্ত্রী সেই শহরে গিয়ে তাঁকে স্বাগত জানালেন। শি জিনপিংয়ের এই সফরকে ‘যুগান্তকারী’ মনে করা হচ্ছে। এ সফর দুই দেশের সম্পর্ককে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। প্রধানমন্ত্রী মোদির কথায়, ‘এই সম্পর্ক নিছক পাটিগণিতের বাইরে।’ সেই ধারণার সঙ্গে সংগতি রাখতেই সফর শুরুর প্রথম দিনে তিনটি সমঝোতা সই হলো। গুজরাট রাজ্য ও চীনের গুয়াংডং প্রদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হলো প্রথম সমঝোতা। এই চুক্তির ফলে দুই রাজ্য বাণিজ্য, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পর্যটন, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। দ্বিতীয় সমঝোতা গুয়াংজৌ ও আহমেদাবাদ শহরের মধ্যে। দুই শহর বিভিন্ন বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। গুজরাটে শিল্প এলাকা গঠনের জন্য তৃতীয় সমঝোতা স্মারকে সই করলেন চীনের ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও গুজরাটের শিল্পোন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানেরা। দুই নেতা এরপর যান সবরমতি নদীর তীরে গান্ধীজির আশ্রমে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এই নদীটির সংস্কার করেন মোদি। রাতে প্রেসিডেন্টের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী গুজরাটি ডিনারের বন্দোবস্ত করেছেন। দেড় শ পদের এই নৈশভোজের তদারকিতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফর এককথায় ত্রিমাত্রিক। আশা করা হচ্ছে, এ সফরের পর সীমান্ত সমস্যার একটা সুরাহা হবে। চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফরের সময়ই কাশ্মীরের লাদাখের চুমুর এলাকায় চীনা সেনাদের ‘অনুপ্রবেশের’ ঘটনা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া সরব।
আজ দিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সীমান্ত বিরোধ প্রসঙ্গ বিবেচিত হবে। ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের বাকি দুটি ক্ষেত্র সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা। সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তারে ভারতের আগ্রহ বিপুল এবং এ সহযোগিতা যাতে একতরফা না হয়, সেটাও ভারতের লক্ষ্য। এ জন্য এই সফরে ভারত চাইছে দুই দেশের বাণিজ্যে (সাড়ে ছয় হাজার কোটি ডলার) চীনের পক্ষে একতরফা যে ধারা চলছে, তাতে সামঞ্জস্য আনতে। এ কারণেই মোদি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’র স্লোগান দিয়ে রেখেছেন। চীনকে বলা হবে, তারা একদিকে সে দেশে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ বাড়াক, অন্যদিকে তাদের জিনিস ভারতে তৈরি করুক এবং বিশ্বের যেখানে খুশি বেচুক। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে ভারত চায় চীন তাদের বাজার ভারতীয় পণ্যের জন্য আরও খুলে দিক। চীনের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় এই মুহূর্তে চার ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিপুল সঞ্চয় থেকে চীন অন্তত ৫০ হাজার কোটি ডলার বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এই মুহূর্তে ভারতে চীনের লগ্নি কমবেশি ৪০ কোটি ডলার, যার বেশিটাই গুজরাটে। চীন-ভারত সম্পর্কে আশার ক্ষেত্র যতটা, আশঙ্কার ক্ষেত্রও ততখানি। জাপান ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারতের মাখামাখি চীনের পছন্দ নয়। এ নিয়ে সম্পর্কে টানাপোড়েন আছে। যেমন আছে দালাই লামা ও তিব্বতনীতি নিয়ে। অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের নীতিও ভারতের অপছন্দ। সেখানকার ভারতীয়দের জন্য চীনের পৃথক ভিসানীতির কোনো সুরাহা হয় কি না, আজ তা বোঝা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.