জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। ২১শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে তার সফরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে চলবে ২৮শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সচিব মো. শহীদুল হকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ৫ই জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনা এই প্রথম জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন। বিশ্ব পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আসন্ন অধিবেশনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পেশাদার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। এ কারণে এবারে বেশ বড় ডেলিগেশন নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। মোট কতজন তার সফরসঙ্গী হচ্ছেন- জানতে চেয়ে একাধিক প্রশ্ন আসে সংবাদ সম্মেলনে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না করে বলেন, অর্থ, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, প্রবাসী কল্যাণ, পরিবেশ ও বন, খাদ্যমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ প্রায় ৫০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো না হলেও সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সংসদ সদস্য, সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, বিশিষ্ট বক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, নিরাপত্তা ও মিডিয়া টিম এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল (নিজ খরচে) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন। সব মিলে এ সংখ্যা ১৭০’র বেশি হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্বাধীনতার পর এত বৃহৎ ডেলিগেশন এবারই প্রথম। সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই জাতিসংঘ অধিবেশনের বিভিন্ন পর্বে অংশ নেবেন। ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে সামনে রেখে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ৬৮তম জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে সংস্থার মহাসচিব বান কি-মুনের সঙ্গে ১৫ মিনিটের একটি বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে স্থায়ীস্থ কম হলেও এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। ওই বৈঠকেই বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন মুন। বিশ্ব বিবেকের আহ্বান সত্ত্বেও দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোন সমঝোতা হয়নি। বরং বিরোধী প্রধান জোট ও দলগুলোকে বাদ দিয়ে এখানে একটি নির্বাচন হয়েছে। এর ১৫৪ আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতারই প্রয়োজনই পড়েনি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বান কি-মুন তার অবস্থানেই অটল রয়েছেন। সম্প্রতি আবারও তিনি সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এবার মুনের সঙ্গে কোন বৈঠক প্রস্তাব করা হয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক। পররাষ্ট্র মন্ত্রী তা স্পষ্ট করেননি। অবশ্য সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলেও একটি অনুষ্ঠানে  শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুন। প্রধানমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত।

সংবাদ সম্মেলনে যা বলা হয়েছে: পররাষ্ট্র দপ্তরের আনক্লজ সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর এই প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসছে। এটি সরকারের ভাবমূর্তি উপস্থাপনের একটি সুযোগ হতে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, নিয়মিত অধিবেশনে ভাষন দেয়া ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সঙ্গে বৈঠক করবেন। সাইড লাইনে চিলি, কাতার, নেপাল ও বেলারুশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও তার বৈঠকের আলোচনা চলছে। ২৭ শে সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেয়ার সময়ক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে ২৩ শে সেপ্টেম্বর, বৈশ্বিক শিক্ষা নিয়ে ২৪ শে সেপ্টেম্বর, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ২৬ শে সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান মাহমুদ আলী। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভের ৪০ বছরপূর্তি  উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও শেখ হাসিনার বক্তৃতা করার কথা রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জলবায়ু ও অভিবাসী শ্রমিকের অধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে ভাষণে: আসন্ন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু ও অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, এবারের অধিবেশনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ডেলিভারিং অন এ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টিং এ ট্র্যান্সফরমেটিভ পোস্ট-২০১৫ ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা’। অধিবেশনে জাতিসংঘের পোস্ট মিলিনিয়াম গোলস-এর (এমডিজি) একটি প্রস্তাবনা আনা হতে পারে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, অতীতের বছরগুলোর মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেবেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি বিষয়ের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।

No comments

Powered by Blogger.