রওশনের ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে by মিজানুর রহমান

চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। কিন্তু জাপান ও ওআইসিকে রাজি করানো যায়নি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হয়েছেন জাতীয় পার্টি নেত্রী রওশন এরশাদ। তার দল সরকারেও আছে। বিদেশী বন্ধু উন্নয়ন সহযোগীরা সরকার ও বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন, এটি কূটনৈতিক শিষ্টাচার। কিন্তু অদ্ভুত পদ্ধতির এবারের অফিসিয়াল বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করেননি কিছু দিন আগে ঢাকা সফর করে যাওয়া জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং ওআইসির মহাসচিব আয়াদ আমিন মাদানি। যদিও সরকারি পর্যায়ে অনেক বৈঠক করেছেন তারা। ওই নির্বাচন বর্জনের কারণে সংসদের বাইরে থাকা দেশের সবচেয়ে বড় জোট নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তাদের বৈঠক হয়নি। জাপানের তরফে বৈঠকের আগ্রহ ছিল। বিএনপি তো প্রস্তুত ছিল-ই। কিন্তু বৈঠকটি হয়নি- এটাই সত্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদায়ের পর জাপানের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত এ নিয়ে বিএনপির কাছে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। ওই বৈঠকগুলো না হওয়ায় খালেদা জিয়া বিচলিত না হলেও বেজায় কষ্ট পেয়েছেন সংসদের বিরোধী নেতা রওশন এরশাদ। তিনি চিঠি লিখে তার দুঃখবোধের কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। দশম সংসদের পাঁচ মাসেও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে ঢাকা সফরে আসা বিদেশী গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের সঙ্গে বৈঠক না হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। একই সঙ্গে তার সহযোগিতা চান। বলেন, ঢাকা সফরে আসা বিদেশী ব্যক্তিত্ব ও প্রতিনিধি দলকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রী  যেন তার দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। রওশন বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এটা আমাদের সরকার, সংসদ ও দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি এতে সংসদে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কিত ভুল ধারণাও কেটে যাবে। চিঠি পাওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার অধস্তনদের তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে। কর্মকর্তারাও সেই নির্দেশ তামিল করেন। সরকারের তরফে ঢাকাস্থ বিদেশী মিশনগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে বর্তমান সরকার ও বিরোধী দলের কাঠামো সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। খালেদা জিয়া এখন আর বিরোধী দলের নেতা নন- সেটিও স্পষ্ট করা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া সফরের মধ্য দিয়ে রওশন এরশাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে চলেছে। রওশনের দল জাতীয় পার্টি কিংবা তার রাজনৈতিক সচিব এখনও বৈঠকটির বিষয়ে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি, বা বলেননি। তবে সরকার ও কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, বৈঠকটি হচ্ছে। এ জন্য শুক্রবার সকালে একটি সিডিউলও প্রস্তাব করা হয়েছে। কোন ব্যতিক্রম না ঘটলে ওই বৈঠকের মধ্য দিয়েই সুষমার তৃতীয় দিন ও শেষ দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। অবশ্য তার আগের দিনের অর্থাৎ ২৬শে জুন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সেরে নেবেন সুষমা স্বরাজ। ওই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বিস আয়োজিত একটি সেমিনারে ভাষণও দেবেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও ড. মশিউর রহমান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.