সরকার টিকে থাকার বৈধতা খুঁজছে

বাংলাদেশে সরকার টিকে থাকতে বৈধতা খুঁজছে। এজন্য গত নির্বাচন ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলে পশ্চিমা যেসব দেশ তীব্র সমালোচনা করেছিল তাদের দিক থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ। তাই তারা নতুন বন্ধু হিসেবে চীন, রাশিয়া ও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এর মধ্য দিয়ে তারা টিকে থাকার বৈধতা খুঁজছে। বাংলাদেশের এমন পদক্ষেপের প্রতি নিবিড় নজর রাখছে ভারত। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কড়া সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন সংস্থা। তাদের উদ্বেগের সঙ্গে তাল মিলায়নি চীন, রাশিয়া ও জাপান। তাই এ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আল জাজিরার রিপোর্টে বলা হয়, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যমে পশ্চিমাদের দিকে অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সরকারের বৈধতার ওপর যে আঘাত এসেছে তা ঠিকঠাক করাতে তিনি যখন বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছেন তখন সেদিকে নিবিড় নজর রাখছে ভারত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর শাহিদুজ্জামান  বলেন, শেখ হাসিনার চীন সফরের ফলাফল কি তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সংশয় থাকতে পারে নয়া দিল্লির। তারা আরও বুঝতে পারছে যে, বাংলাদেশে যে সরকার এখন আছে তারা টিকে থাকতে পারবে যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে চীন তাদেরকে সহায়তা দেয়। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ৪০ বছর ধরে চীনের সঙ্গে ঢাকা দৃঢ় সম্পর্ক রক্ষা করে আসছে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত প্রকল্পে এই চীন একটি বড় অংশীদার। কিন্তু ঢাকায় পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলেন, তারা শেখ হাসিনার সর্বশেষ এই সফরকে দেখছেন চীন, রাশিয়া ও জাপানের মতো ওই সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করা, যেসব দেশ তার সরকারের বৈধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেনি পশ্চিমাদের মতো। পর্যবেক্ষকরা এ বিষয়টিকে দেখছেন ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়া সমালোচনার জবাব হিসেবে। ৫ই জানুয়ারির ওই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দল বিএনপি সহ ১৯ দলীয় জোট। ওই নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হয়। ব্যাপক জালিয়াতি হয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই নির্বাচনের ফলকে অবিশ্বাসযোগ্য বলে মন্তব্য করে। দক্ষিণ এশিয়ার এদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি চীন সফর করেছেন। এটা করা হয়েছে শুধু ব্যবসায়ী উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, এটা করা হয়েছে বেইজিংকে একটি গন্তব্য হিসেবে ধরে নিয়ে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বাংলাদেশের সরকার নিয়ে মাথা ঘামায় না চীন। প্রফেসর শাহিদুজ্জামান বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার এখন টিকে থাকতে বৈধতা খুঁজে বেড়াচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ৬ দিনের চীন সফর সম্পন্ন করেন। এ সময় কয়লাচালিত ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক ও প্রযুুক্তিগত চুক্তি হয়। বন্যা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয়। এ সময়ে দু’দেশ চট্টগ্রামে একটি চীনা অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ জোন গড়ে তোলা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সোনাদিয়ায় দ্বিতীয় একটি বন্দর নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, দু’দেশ ২০১৫ সাল জুড়ে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হবে। ওদিকে বিজিএমইএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম মুর্শেদি বলেছেন, গত বছর দু’দেশের মধ্যে ১০৩০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে।

No comments

Powered by Blogger.