বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ভিসানীতি বদল

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের ঠিক দুদিন আগে ভারত সরকারের বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন ঘটেছে। ভিসা নীতি নিয়েই সরকারের পরিবর্তন সকলের চোখে পড়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বাংলাদেশের দিক থেকে নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে বলে এখনও মনে করে। অথচ গত বছর ভারত ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের বৈঠকে ভিসা নীতি সরল করে অন্যান্য অনেক দেশের মত ভারত বাংলাদেশিদেরও ভিসা অন এরাইভেল দেবার ব্যাপারে একমত হয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকেও খারিজ করে দিয়েছে ভারতের নতুন সরকার। বাংলাদেশিদের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশ বা ভিসা অন এরাইভেলের কোনও সুবিধা দিতে রাজি নয় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এ ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদীরও সমর্থন রয়েছে বলে জানা গেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এ কথা বাংলাদেশকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের আলোচ্যসুচিতে বিষয় দুটি রাখার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক আগ্রহী ছিল। আর তাই এই দুটি বিষয়ে মতামতের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানো হয়েছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল গত বছরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশিদের ভিসা অন এরাইভেল ব্যবস্থা চালু করা হোক। আরেকটি প্রস্তাবে বলা হয়েছিল ১৮ বছরের নীচে ও ৬৫টি বছরের উপরের বাংলাদেশিদের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হোক। পরে অবশ্য বয়সের সীমা সংশোধন করে ১২ বছরের নীচে এবং ৭০ বছরের উপরে করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দুটি প্রস্তাবই খারিজ করে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ইতিমধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে এই দুটি প্রস্তাব নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ প্রবলভাবে সমালোচনা করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রস্তাবের রেকর্ড তার কাছে রয়েছে। তিনি তিন তিনবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মোদী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, দেশের স্বার্থ কোনভাবে ক্ষুন্ন হোক তা তিনি মেনে নেবেন না। তিনি জানিয়েছিলেন, এই ধরনের প্রস্তাবে দেশের নিরাপত্তাই বিপদের মুখে পড়বে। তবে ঢাকা সফরে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশিদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মাল্টিপল ভিসা দেবার বিষয়টি আলোচনা করতে পারেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশিরা এক বছরের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসা পেয়ে থাকেন। এই সময়সীমাকে ভারত ৫ বছর করতে আগ্রহী। তবে এ ব্যাপারে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক  ভারতে আসা বাংলাদেশিকে বছওে একবার ফরেনার রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে হাজিরা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছে।

প্র্রতিবেশি দেশে নিযুক্ত মিশন প্রধানদের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক : প্রতিবেশিদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শক্তিশালি করার লক্ষ্যে কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রকে একটি কনক্লেভের আয়োজন করা হয়েছিল। সোমবারের সেই কনক্লেভে পাকিস্তান ও চীন সহ প্রতিবেশি সব দেশে নিযুক্ত ভারতীয মিশনের প্রধানদের যোগ দেবার জন্য ডেকে পাঠানো হয়েলিছ। বেশ কয়েকটি পর্বে ভাগ করে সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকে এই ধরণের কনক্লেভের আয়োজন এই প্রথম।  জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নিজে উপস্থিত থেকে নতুন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি তুলে ধরেন। প্রত্যেক দেশের জন্য আলাদা ফলোআাপ পরিকল্পনা তৈরি করে  নির্দিষ্ট সময় ভিত্তিক রূপায়নের উদ্যোগ  নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই প্রত্যেক প্রতিবেশির সঙ্গে সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে প্রযোজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেই সার্ক দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের শপথগ্রহন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রতিবেশিদের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় রচনা করার উদ্দেশ্যে। সেই সময়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রত্যেক প্রতিবেশির সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। এরপরেই তিনি ছুটে গিয়েছেন ভুটান সফরে। এরপরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে এককভাবে বাংলাদেশ সফরে যাবার নির্দেশ দিযেছেন। আগামী ২৫ জুন বাংলাদেশ দিয়ে এককভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর শুরুর আগে মিশন প্রধানদের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাকে বিশেষজ্ঞরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন্। ইতিমধ্যেই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুষমা স্বরাজ সহযোগিতার নানা ক্ষেত্র নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.