উপজেলা নির্বাচন

১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠার একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা ইতিবাচক। প্রথম পর্যায়ের এই নির্বাচনে দেশের ৯৭টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন নিয়ে দেশে সব সময় উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়। একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করাই এখন নির্বাচন কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। গত ৫ জানুয়ারি দেশে যে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, তা অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করায় সেই নির্বাচন জনমনে আগ্রহ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং নির্বাচনী উৎসাহ-উদ্দীপনা বলতে যা বোঝায়, সেটাও ছিল না। ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্যায়ের যে উপজেলা নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা নির্দলীয়, কিন্তু অরাজনৈতিক নয়। জাতীয় নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দলের নেতাদের অংশগ্রহণে এই নির্বাচন যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ৫ জানুয়ারি কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা ফিরে আসা শুরু করুক—সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। সব দল ও মতের প্রার্থীরা যদি সমান সুযোগ ও সুবিধার ভিত্তিতে নির্বাচন করতে পারে, তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি উৎসবমুখর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
নির্বাচন কমিশনকেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বপূর্ণ আচরণ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। গত মহাজোট সরকারের মেয়াদে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় না রাখতে পারলে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারটি আরও বিতর্কিত হয়ে পড়বে। তবে শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠান নয়, স্থানীয় সরকার হিসেবে উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করে তোলার উদ্যোগটিও সরকারকে নিতে হবে। তা না হলে মেয়াদ শেষে এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হবে। এটা দুঃখজনক যে উপজেলা পরিষদ বর্তমানে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবেই রয়ে গেছে। স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির ওপর স্থানীয় সাংসদদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা উপজেলা পরিষদকে প্রায় অকার্যকর করে রেখেছে। উপজেলা পরিষদ আইনে স্থানীয় সাংসদদের উপদেষ্টা করে তাঁদের পরামর্শ মানা বাধ্যতামূলক করার যে বিধান কার্যকর রয়েছে, তা বাতিল করা জরুরি। কারণ, এই বিধান সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। পাশাপাশি যে ১৭টি বিভাগ উপজেলা পরিষদের হাতে হস্তান্তর করার নির্দেশনা মন্ত্রিপরিষদের রয়েছে, তা যেন আগামী নির্বাচিত পরিষদের হাতে হস্তান্তর করা হয়, সেই বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য উপজেলা নির্বাচনের পাশাপাশি একটি কার্যকর উপজেলা পরিষদ দেখতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.