আমি কারও লুঙ্গি ধরে টানাহেঁচড়া করিনি by ওয়েছ খছরু

আমি নির্দোষ। ওরা আমার চরিত্রে কলঙ্কের তিলক এঁকে দিলো। আমি কোনও পাপ করিনি। কারও লুঙ্গি ধরে টানাহেঁচড়া করিনি। কোনও ছবিও তুলিনি।’
-একদিনের হাজতবাস শেষে গতকাল বেরিয়ে এসে কেঁদে কেঁদে সাংবাদিকদের এ কথা জানালেন সিলেটের গ্রেপ্তার হওয়ার সিটি কাউন্সিলর দিবা রানী দে বাবলী। এ সময় তাকে বরণ করতে কারা ফটকে অর্ধশতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। এ সময় দিবা রানী বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার সম্পত্তি দখল করতে একটি সিন্ডিকেট পুলিশকে দিয়ে হেনস্তা করিয়েছে। ওরা আমার সম্পত্তি দখল করতে চায়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলর হয়েও কেবলমাত্র সম্পত্তির কারণে সাজানো মামলায় হাজতে যেতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির রাজনীতি করি। এ কারণে ওই চক্র বিরোধী চক্রকে দিয়ে নাটক সাজিয়েছে।’ কারাগার থেকে বেরিয়ে দিবা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিচার জনতার আদালতে দিলাম।’

সিলেটে সরকারদলীয় ভূমিখেকোদের ছোবলে পড়ে কারাগারে যেতে হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের মহিলা কাউন্সিলর দিবা রানী দে বাবলীকে -এমন অভিযোগ তার স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের। গ্রেপ্তার হয়ে একদিন কারাভোগের পর রোববার সন্ধ্যায় মুক্তি পেয়েছেন তিনি। সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিলে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এ সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ তার স্বজনরা কারা ফটকে উপস্থিত হয়ে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। শনিবার বিকালে সিলেট নগরীর যতরপুরের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিলেট কোতোয়ালি পুলিশ। একই এলাকার আবদুল মতিনের দায়ের করা মামলায় (নং-২৯(১)১৪) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাওলানা আবদুল মতিনকে উলঙ্গ করে অশ্লীল ছবি তোলার দায়ে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জানায় পুলিশ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর দিবা রানী দে-র বর্তমান বাসস্থানের বাসা ও ভূমি নিয়ে রয়েছে বিরোধ। সিলেট নগরীর যতরপুরের শ্রীশ্রী বিশ্বেশ্বর দেবমন্দিরের ওই ভূমিতে থাকেন দিবা রানীর স্বামী মনীন্দ্র রঞ্জন দে-র পরিবার। এ ভূমি নিয়ে রয়েছে মনীন্দ্র দে-র একাধিক মামলা। শ্রীশ্রী বিশ্বেশ্বর দেবমন্দিরের ওই ভূমি অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় নিয়ে একটি মহল দখল করে নেয়ার চেষ্টা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। মনীন্দ্র রঞ্জন দে তার পিতার ক্রয় করা ভূমি দাবি করে বসবাস করে আসছেন এবং বর্তমান সরকারের  সঙ্গে রয়েছে তার একাধিক দেওয়ানি ও অর্পিত আইনের মামলা রয়েছে। মনিন্দ্র রঞ্জন দে-র অভিযোগ, সরকারদলীয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ভূমিখেকো চক্র তার স্বত্ব-দখলীয় বাসা ও দেবমন্দির দখলে নিতে উঠে পড়ে লাগে। দু’বছর আগে এ দলের ভূমিখেকোরা ছাত্রলীগের কর্মী তিতাসকে দিয়ে তার বাড়িঘরে হামলা করে তাদের উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হয়। সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েলকে দিয়েও আদালতে একটি মামলা করানো হয়। ভূমিসংক্রান্ত মামলাগুলো নিম্ন ও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এ অবস্থায় অতি সমপ্রতি সরকারদলীয় একটি ভূমিদস্যুচক্র সংখ্যালঘু মনীন্দ্র পরিবারকে উচ্ছেদে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বলে দাবি করেন মনিন্দ্র রঞ্জন। আর এ অংশ হিসেবে গত ২৭শে জানুয়ারি জনৈক আবদুল মতিনকে দিয়ে তার পরিবারের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করায়। পরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পুলিশকে দিয়ে মনীন্দ্রর স্ত্রী দিবা রানীকে গ্রেপ্তার করানো হয় বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে, দিবা গ্রেপ্তারের পর সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়। দিবা রানীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তিন দিনের মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিজ-এইচআরসিবিএম। গতকাল জিন্দাবাজারস্থ জেলা কার্যালয়ে সভায় বক্তারা বলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না করলে শুক্রবার থেকে আন্দোলন শুরু করা হবে। বিভাগীয় সমন্বয়ক রাকেশ রায়ের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান অতীন্দ্র রঞ্জন দে, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন রঞ্জন দাস, নারীনেত্রী পিংকি দেব নাথ। এইচআরবিসিএম-এর সমন্বয়ক রাকেশ রায় বলেন, একটি চক্র দিবাকে হয়রানিকে করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি দাবি করেন, দিবার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক।

No comments

Powered by Blogger.