এক বছরে ১৫ জনপ্রতিনিধি খুন, বিচার হয়নি একটিরও

সন্ত্রাস আর রাজনৈতিক সহিংসতায় শুধু সাধারণ নাগরিকই নয় প্রাণ যাচ্ছে জনপ্রতিনিধিদেরও। বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় গত এক বছরে অন্তত ১৫ জন জনপ্রতিনিধি প্রাণ হারিয়েছেন।
গত এক বছরেই সারা দেশে খুন হয়েছেন ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ২ জন ইউপি সদস্য। তাদের প্রত্যেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সবচেয়ে বেশি জনপ্রতিনিধি হত্যার ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণাঞ্চলে। গত ৩০ বছরে যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায় খুন হয়েছেন শতাধিক ইউপি চেয়ারম্যান।  এসব হত্যায় একটিরও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। গত বছরের ১০ই মার্চ পাবনার সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ইবরাহিম আলী মৃধার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার লালন শাহ সেতু সংলগ্ন মহাসড়কে তার লাশ পাওয়া যায়। ২৪শে মার্চ যশোরের বেনাপোলের পোর্ট থানার পটুয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক নিহত হন। শার্শা উপজেলার মাইজডাঙ্গা নামক স্থানে সন্ত্রাসীরা তার ওপর গুলি চালায়।  ২১শে মার্চ হত্যা করা হয় মেহেরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ডা. হামিদুর রহমান হেলালকে। তাকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়। এসময় পিতাকে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বোমায় নিহত হন তার কলেজপড়ুয়া কন্যা সুমি। ১৭ই জুন ঝিনাইদহ উপজেলার নলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী  লীগ নেতা  রুহুল আমীন বিশ্বাসকে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৮ই আগস্ট হবিগঞ্জ সদরের গোপায়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইসহাক মিয়া খুন হন। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনি নিহত হন। ১লা সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফুরকান উদ্দিন সেলিম মৃধা ওরফে পাহাড়ি সেলিম নিহত হন। ৫ই অক্টোবর প্রকাশ্যে নিহত হন যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউপি চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান। দিনে-দুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে তাকে হত্যা করে। ৮ই ডিসেম্বর কুষ্টিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সী রশিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ১২ই ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুল্লাহ চৌধুরীকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ২০শে ডিসেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম ফারুককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ৩০শে ডিসেম্বর সাতক্ষীরার আগরদাঁড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা আনারুল ইসলাম যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। গত ১৮ই জানুয়ারি নাটোরের সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলার রহমানকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। ৩রা জানুয়ারি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। টোলনাস্থ নিজ বাড়িতে গুলি করা হয় তাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ২৭শে জানুয়ারি সিলেটের জৈন্তাপুর ইউপি সদস্য শামসুদ্দিন দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। ১২ই এপ্রিল নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাগডোর ইউপি সদস্য আবদুস সালাম প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন। ২০১০ সালের ৮ই অক্টোবর প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নাটোরের বড়াই গ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নূর বাবুকে। এরপর ২০১১ সালের ১লা নভেম্বর নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হোসেনকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে।

No comments

Powered by Blogger.