কার অধীনে জাতীয় নির্বাচন মূল সঙ্কট সেখানেই by আমীর খসরু

এক ভয়াবহ জটিল এবং কঠিন সঙ্কটে পড়েছে দেশ। সঙ্কটটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই। আর এটা অপ্রত্যাশিত তো নয়ই বরং এতকাল ধরে এই সঙ্কটের পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছিলেন সবাই।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা অগ্রাহ্য করেছেন। কাজেই এই মহাসঙ্কটের কারণটি কী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বহুবার বহুভাবে দেশের বিশিষ্টজন থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত এমন কথাটি বলছিলেন যে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনের পথে গেলেই আগে থেকে বিদ্যমান সঙ্কটটি আরও তীব্রতর হবে। আর একদলীয় নির্বাচন হলে যে সঙ্কটের সৃষ্টি হবে তা সামাল দেয়া প্রধানমন্ত্রী বা তার সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে সম্ভব হবে না—এমন কথাও বলা হচ্ছিল। এই সঙ্কটটি যে সামগ্রিকভাবে দেশকে বিপন্ন, বিপর্যস্ত করেছে তাই নয়, খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীনরাও এই সঙ্কট এবং জটিলতার মধ্যে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারাই। কারণ একদিকে সব রাজনৈতিক দল, অন্যদিকে একা এবং এককভাবে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি ভেঙে দেয়ার সময় সবাই সতর্ক করে দিয়েছিল ভবিষ্যতের বিপদটি সম্পর্কে। পরেও বার বার বলা হচ্ছিল, দেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা চায়। কিন্তু তখন এবং কয়েকদিন আগে পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী তা তোয়াক্কা তো করেনইনি বরং এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন যাতে নির্বাচনটি একদলীয় হয়।
একদলীয় নির্বাচনটি আয়োজনের একেবারে প্রাথমিক পর্বে সরকারের ধারণা ছিল, তারা শুধু বিএনপি এবং এর জোটভুক্ত গুটি কয়েক দল বাদে সবাইকে নির্বাচনের সঙ্গী হিসেবে পাবে। এমনকি তাদের এমনও ধারণা ছিল এবং চেষ্টাটাও তেমন হয়েছিল যাতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং এর জোট থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং শামিল হবেন তাদের কাফেলায়। কিন্তু তা তো হয়ইনি বরং যে এরশাদকে পাওয়া গিয়েছিল শেষ পর্যন্ত তিনিও আর থাকলেন না বলে জানিয়ে দিলেন। তবে এরশাদকে নিয়ে শেষ কথা বলার কিছু নেই—এমনটা সরকারের অনেকেসহ কেউ কেউ ভাবছেন।
মাত্র কয়েকদিন আগ পর্যন্তও প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকার এবং দলের সবাই একযোগে বলছিলেন, কেউ না এলেও নির্বাচন হবেই। এখন বরং উল্টো কথাটি শোনা যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রীসহ অনেকেই বলছেন যে, বিরোধী দল না এলে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে সরকারের কেউ কেউ খুব ক্ষীণ স্বরে বলছেন, যথাসময়ে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে। তবে দিনে দিনে, মুহূর্তে মুহূর্তে তাদের সে বিশ্বাসে যে ধস নামছে তা টের পাচ্ছেন সবাই।
সংলাপ অনুষ্ঠান নিয়েও সরকার নানা টালবাহানা করেছে এবং সত্যিকার অর্থে যেন কোনো সংলাপ না হয় তার চেষ্টাটি ছিল শেষ সময় পর্যন্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দুনিয়ার দেশগুলো, এমনকি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চুপচাপ থাকার নীতি গ্রহণকারী চীনও সরব হয়ে উঠে একযোগে বলতে শুরু করল—‘সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।’ জাতিসংঘ সরাসরি উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব চিঠি দিয়ে, টেলিফোনে কথা বলে, এমনকি বিশেষ দূত পাঠিয়ে চেষ্টা চালালেন সমঝোতার। কিন্তু কোনো ফললাভ হয়নি ওই সময়। কারণ শেখ হাসিনা অনড় ছিলেন তার অবস্থানে। আর এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে যা দেখা যাচ্ছে তা হলো একটি দেশের ওপর অগাধ বিশ্বাস এবং অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা। সবশেষ ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের ঢাকায় রাজনৈতিক সফরটিও ছিল ওই বিশ্বাস এবং আস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য। সংবাদ সম্মেলনে সুজাতা সিং বললেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তির উত্থান হবে। যত বেশি সংখ্যক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা যায় তা-ই মঙ্গল। এ কথার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বিএনপিসহ বিরোধী পক্ষকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে ভারতের কোনো আপত্তি নেই। সুজাতা সিং সব কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করে বিভিন্ন দলের কাছে আহ্বান জানালেন যাতে তারা এই নির্বাচনটিতে অংশ নেয়। কিন্তু একথাটি ফাঁস করে দিলেন জাতীয় পার্টির প্রধান এরশাদ। নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে বাংলাদেশে ভারত তাদের পছন্দমতো সরকার চায়—তা তারা আগেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। কাজেই সুজাতা সিংয়ের সফরে এর বাইরে কিছু হবে না, এটাই প্রত্যাশিত ছিল।
একটি কথা বলা প্রয়োজন, ১৯৯৬ সালে একদলীয় একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করার কারণে বিএনপি এখনও পর্যন্ত সেই ক্ষতির বোঝা টানছে। কিন্তু ১৯৯৬-এর নির্বাচনের সঙ্গে ২০১৩ সালের এই নির্বাচনটির বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য রয়েছে এর প্রেক্ষাপটের, পার্থক্য রয়েছে পরিস্থিতির। ১৯৯৬-এর নির্বাচনের আগে বিএনপি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাসের জন্য তারা নির্বাচনটি করছে। যদিও বিএনপির ওই সময়কার অনেক নেতা একদলীয় একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি অধিবেশনের মধ্য দিয়েই সমাপ্তি ঘটেছিল ওই সংসদটির। এরপরও বিএনপি রাজনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পায়নি। কিন্তু ২০১৩-এর একদলীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার এবং দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যেই এই একদলীয় নির্বাচনটির আয়োজন করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো চাপ সৃষ্টি করেছিল এই কারণে যে, যাতে বিএনপি এই নির্বাচনটিকে ক্ষমতায় টিকে থাকার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক বিল পাসের ব্যাপারে ওই সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তেমন কোনো আপত্তি ছিল না। যে বিরোধিতাটা ছিল, তা ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক কৌশল। এছাড়া তত্কালীন বিএনপিকে আন্তর্জাতিকভাবে তেমন কোনো চাপের সম্মুখীনই হতে হয়নি। কিন্তু সব কিছু বিবেচনায় ২০১৩-এর নির্বাচন কেন্দ্রিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন। আগেই বলা হয়েছে যে, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এমন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করছে, যাতে তারা ছাড়া আর কেউ নেই। এ কারণেই অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চাপ ক্ষমতাসীনদের জন্য একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
এত সব চাপের পরও সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজি না হলে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলটিকে কি পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে তা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটি আলোচনার বিষয়। এখানে মনে রাখতে হবে, ১৯৯৬ সালে কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেনের ঢাকা সফর আর ২০১৩-এর এই দফায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর ঢাকা সফরকে এক করে দেখা ভুল হবে। এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে, জাতিসংঘ এসব বিরোধপূর্ণ বিষয়ে দূতিয়ালিতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে সব কাজ করে থাকে। আর এখানেই হচ্ছে কমনওয়েলথ এবং জাতিসংঘের পার্থক্য।
তারানকোর ঢাকা সফরে তিনি দফায় দফায় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ বিবদমান দুই পক্ষ, নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে। তবে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। এসব বৈঠকের পর তারানকো সংবাদ মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তার উপদেষ্টা এবং দলের নেতারা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাতে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. তারানকো জানতে চেয়েছেন নির্বাচনের তারিখ পেছানো যায় কিনা। তিনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকেও এমন প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন এবং জবাবও পেয়ে গেছেন। দুই. সব দলের অংশগ্রহণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের কথাও বলেছেন। এই দুটো বিষয়েই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিমত ছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে, জাতিসংঘ ৫ জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচনকে কোনোক্রমেই অনুমোদন করে না। তাছাড়া সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হতে পারে না ও বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠানটি যে সম্ভব নয় তাও স্পষ্ট।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের যে প্রশ্ন অর্থাত্ নির্বাচন পেছানো যায় কিনা সে প্রশ্নে বাস্তবসম্মত উত্তর হচ্ছে, নির্বাচন পেছানো বা পুনঃতফসিলিকরণ সম্ভব। বর্তমানে সরকার যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা অনুযায়ী নির্বাচনটি করতে চাচ্ছে, তা সংবিধানের ১২৩-এর ৩-এর (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। আর এতে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যবস্থা অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে যদি নির্বাচনটি করতে দু’পক্ষই রাজি থাকে তাহলে বড়জোর দশ-পনেরো দিন সময় পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে অর্থাত্ পুনঃতফসিলিকরণ সম্ভব। তবে অনেকে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও অনুযায়ী যতক্ষণ পর্যন্ত গেজেট না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা নির্বাচিত বলে বিবেচিত নন। কাজেই বর্তমান জাতীয় সংসদ বহাল রেখে অর্থাত্ সংবিধানের ১২৩-এর ৩ (ক) অনুযায়ী পুনঃতফসিলিকরণ সম্ভব। আর বর্তমান সংসদ বহাল রেখে, এই সরকারের অধীনে এবং এই স্বল্পসময়ে যদি নির্বাচনে বিরোধী পক্ষ রাজি না হয় তাহলেও নির্বাচন পেছানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে সংবিধানের ১২৩-এর ৩ (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যবস্থাটি গ্রহণ করতে হবে। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—‘মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে’ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। এই ব্যবস্থাটি অনুসরণ করলে সংসদও থাকছে না এবং বর্তমান সরকারটিও অনির্বাচিত সরকার হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করছেন অনেকে। তাদের মতে, জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। নির্বাচন পাঁচ বছরের মধ্যেই হতে হবে। এর অতিরিক্ত হলে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তবে তারা বলছেন, যদি সমঝোতা হয় সেক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা প্রশ্নে সুপ্রিমকোর্টের মতামত গ্রহণ করে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি পরিপূর্ণভাবে উল্টে যাবে।
কিন্তু মূল কথা হচ্ছে এবং বিদ্যমান সঙ্কটটির আসল জায়গাটি হচ্ছে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা মানবেন কিনা? এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রী একক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তিনি এখন কোন পথ গ্রহণ করবেন তা তার ওপরই নির্ভর করে।
মূল প্রশ্নটি হচ্ছে, ভবিষ্যত্ নির্বাচন কি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে তার সরকারের অধীনেই হবে, না তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো উপায়ে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে? এখানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিরোধী পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে তার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা রাজি নয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী তার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় এবং অটল রয়েছেন এখন পর্যন্ত। যদিও তিনি ভিন্ন চিন্তাও করতে শুরু করেছেন। এখানে আরেকটি ফর্মুলা কাজ করছে। তা হলো প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়ে কোনো কিছু করা যায় কিনা।
প্রধানমন্ত্রীর অনড় এবং অটল থাকা আগে তার ‘ইগো’র বিষয় ছিল। এখন বিষয়টি যতটা না ইগো’র কারণে তার চেয়েও বেশি সামগ্রিক পরিস্থিতি চিন্তা করে দুশ্চিন্তা থেকে। কারণ ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোই এখন তার জন্য একটি বড় সমস্যা হিসেবে তিনি দেখছেন এবং তার দলও একই চিন্তা করছে। এখানে নানা বিষয় জড়িত—ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে? বৈরিতার পরিবেশ এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, ওই সময়ে পরিস্থিতি হবে ভিন্ন। আর ভিন্ন যে হবে না তার গ্যারান্টি কারও পক্ষেই দেয়া সম্ভব নয়। আর পুরো পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানের মূল সঙ্কটটি হচ্ছে এখানে অর্থাত্ নির্বাচনটি কার অধীনে হবে? আর তারানকোকে সে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে। আর যদি নিষ্পত্তি না হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নটি আসবে।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনা এবং তার দল রাজি না হয় তাহলে জাতিসংঘ এমন একটি নির্বাচনের দিকে যাবে না। কারণ বিবদমান পক্ষগুলো রাজি না হলে জাতিসংঘ কখনোই এমন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে যায় না। সেক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পর্যন্ত গড়াতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.