নতুন পাসপোর্টের প্রিন্ট বন্ধ, দুর্ভোগ চলছে by দীন ইসলাম

নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রিন্ট হচ্ছে না। গত চার দিন ধরে প্রিন্ট বন্ধ রয়েছে। ফলে পাসপোর্টের আবেদন জমা নেয়া হলেও প্রসেসিং বন্ধ রয়েছে।
বিষয়টি  বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চার দেয়াল ভেদ করে সাধারণ মানুষ খুব একটা জানতে পারেনি। এর আগেই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি সমাধানের জন্য দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছেন। এ জন্য দফায় দফায় সভা করছেন। গত দুই দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তারা বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু পাসপোর্ট প্রিন্ট সমস্যার সুরাহা করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে নতুন এমআরপি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডি লা রুকে অব্যাহত চাপ দিচ্ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। চাপের জবাবে নতুন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগে পাসপোর্ট ছিল ৭ ডিজিটের। নতুন করে ১১ ডিজিটের পাসপোর্ট দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তাই প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে কিছু তো সমস্যা হবেই। সফটওয়্যারগত কিছু ত্রুটি রয়েছে। আশা করছি, তার সমাধান হয়ে যাবে। ওদিকে অনেক সরকারি কর্মকর্তা বা প্রবাসী বাংলাদেশীরা এমআরপি’র মাধ্যমে নতুন করে বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করেছেন। অতি জরুরি পাসপোর্ট নিতে ইচ্ছুক ওই সব ব্যক্তি পড়েছেন মহা ফাঁপড়ে। সহসা পাসপোর্ট পাওয়ার লক্ষণ দেখছেন না তারা। এ কারণে ভিসার আবেদন জমা দিতে পারছেন না। এমন ব্যক্তিদের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ১০ হাজার ও সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৪ হাজার পাসপোর্ট প্রিন্ট করা হয়। তাই সব মিলিয়ে গত কয়েক দিনে অর্ধ লাখ পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়নি। পাসপোর্ট প্রিন্টের এমন জ্যামের রেশ কাটাতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সিরাজউদ্দিন মানবজমিনকে জানান, সফটওয়্যার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পাসপোর্ট প্রিন্ট হচ্ছে না। এটা সাময়িক। আশা করছি দুয়েক দিনের মধ্যে সমস্যা কেটে যাবে। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এতদিন মালয়েশিয়ান কোম্পানি আইরিশ কর্পোরেশন বারহাড জেভি’র (আইরিশ জেভি) মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেয়ার কাজটি করতো। গত দুই বছর বেশ সফলতার সঙ্গে তারা সেনাবাহিনীর সহায়তায় এমআরপি দিয়েছে। তবে গত মে মাসে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ডি লা রু’র কাছ থেকে দেড় কোটি এমআরপি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করে। ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের প্রস্তাবে জানায়, ২৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির প্রস্তাবটি বেশ ভাল। তাদের ডিজাইনও নতুন। নতুন এমআরপি’র কভার পৃষ্ঠার পুরুত্ব ২৯০ মাইক্রোন থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ মাইক্রোন, ভেতরের পৃষ্ঠার পুরুত্ব ১০৫ মাইক্রোনের বদলে ১২০ মাইক্রোন, সিকিউরিটি ফাইবার রেড ভিজিবলের বদলে পিংক ভিজিবল, দুই স্তরবিশিষ্ট বাইন্ডিং সুতার স্তরের বদলে তিন স্তরবিশিষ্ট সুতার স্তর, জাতীয় সংগীতের নির্ভুল টেক্সট ব্যবহার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জাতীয় সংসদের ছবি গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে বিদ্যমান ছবি উন্নত করা, ডাটাপেজ করা হবে। এর আগে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ১৯০টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে ২০১১ সালের ১লা এপ্রিল থেকে সব দেশকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট ও ভিসার প্রচলন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই চুক্তির শর্তানুসারে বাংলাদেশে ২০১০ সালের ১লা এপ্রিল থেকে এমআরপি পাসপোর্ট চালু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় তিন বছরে ৬৬ লাখ পাসপোর্ট ও ১৫ লাখ ভিসা স্টিকার দেয়া হয়েছে। তিন বছরের জন্য এ খাতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৫২৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। নতুন করে আরও প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.