গুলিবিদ্ধ শিশুটি রাস্তায় পড়ে ছিল ১৫ মিনিট! by কাজী আনিছ

উল্টো হয়ে পড়ে আছে প্লাস্টিকের বাটি। পাশে উপুড় হয়ে আছে ১১ বছরের শিশু শান্ত ইসলাম। পরনে লাল-খয়েরি রঙের প্যান্ট আর সাদা ফুল হাতা গেঞ্জি। গেঞ্জিতে ছোপ ছোপ রক্ত।

গতকাল শুক্রবার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে বাবার জন্য ওই বাটিতে ভাত নিয়ে গিয়েছিল শান্ত। ফেরার পথে জামায়াত-শিবির ও পুলিশের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে যায় সে। মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই বাটি নিয়ে সড়কে মুখ থুবড়ে পড়ে শিশুটি। ওইভাবে প্রায় কেটে যায় প্রায় ১৫ মিনিট। তার দিকে তাকিয়ে আশপাশের লোক। ছবি তোলায় ব্যস্ত গণমাধ্যমের কর্মীরা। শেষমেশ জুয়েল নামের এক শিশুশ্রমিক তাকে কোলে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে। তার দেখাদেখি ছুটে আসেন কয়েকজন। শান্তকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের প্রতিহত করতে পুলিশের ছোড়া বেশ কয়েকটি ছররা গুলি শান্তর মাথা, বুক ও পিঠে বিদ্ধ হয়। সে হাসপাতালের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মা আসমা বেগমের সঙ্গে থাকে শান্ত ও ছোট ভাই শাওন। বাবা সোবহান মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুলের সামনে চায়ের দোকানদারি করেন। রূপগঞ্জের একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা সবে শেষ করেছে সে। ভাই শাওনও একই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। পরীক্ষা শেষে মায়ের সঙ্গে ফকিরাপুলে গলিতে খালার বাসায় বেড়াতে এসেছিল দুই ভাই।

পরিবার সূত্র জানায়, দুপুরে খালার বাসা থেকে বাবার জন্য প্লাস্টিকের বাটিতে করে ভাত নিয়ে যায় শান্ত ও শাওন। বাবার খাওয়া-দাওয়ার পর বেলা দুইটার দিকে শাওনকে নিয়ে বাসায় ফিরছিল সে। আর তখনই মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলসংলগ্ন এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালান জামায়াতের কর্মীরা।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি ট্রলিতে কাত হয়ে পড়ে আছে শান্ত। মাথায় ব্যান্ডেজ। পাশে মা আসমা কেঁদেই চলেছেন।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের মাঝে পড়ে শান্ত আহত হয়েছে। সে কি গুলিতে, নাকি ককটেলের হামলায় আহত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.