বাংলাদেশীদের জন্য হজে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ by সালমান ফরিদ

এখন থেকে হজ পালনে গিয়ে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেয়া যাবে না। এমনকি হজপালনকারী রাজনৈতিক নেতাকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল-সমাবেশও করা যাবে না।
এতোদিন বাংলাদেশ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা হজ পালনে গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতেন। বিশেষ করে নেতৃস্থানীয় নেতাদের বেলায় এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দেখা যেতো। কিন্তু এটি হজের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। হজ পালনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আর এই বিবেচনায় বাংলাদেশীদের জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সৌদি আরব। সৌদি সরকার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। সে দেশের হজ মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ও একটি নির্দেশনা জারি করেছে। গত ৯ই ডিসেম্বর হজ এজেন্সিদের অভিভাবক সংগঠন হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব মন্ত্রণালয় থেকে এরকম একটি চিঠি পেয়েছে। ইতিমধ্যে তারা বিষয়টি জানিয়ে প্রত্যেক এজেন্সির কাছে চিঠিও লিখেছে। যাতে তারা ভবিষ্যতে হজযাত্রীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ না দিতে পরামর্শ ও বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে পারে। হাব-এর নেতা ও এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর বড় মাপের নেতারা হজ ও ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যোগ দেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যায়। এদের প্রত্যেকেরই কর্মী-সমর্থক রয়েছে সেখানে। এমনকি শাখাও রয়েছে কোন কোন রাজনৈতিক দলের। হজ মওসুমে দলগুলোর নেতারা সৌদি আরবে গেলে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে হোটেলের সামনে জড়ো হন কর্মী-সমর্থকরা। কখনও কখনও উল্লিখিত স্থানগুলোতে নেতা-নেত্রীদের স্বাগত জানিয়ে মিছিল-মৌন মিছিলও করেন। এসময় কেউ কেউ হজের আনুষ্ঠানিকতা রেখে সেখানে রাজনৈতিক ব্যানারে সমাবেশে যোগ দেন। অথচ বিশ্বের আর কোন দেশের নেতাদের ক্ষেত্রে এরকম ঘটে না। কোন দেশের রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা হজ পালনে গিয়ে সভায় যোগ দেন না বা তাদের স্বাগত জানিয়ে কোনও তৎপরতা দেখা যায় না। হজ মওসুমে এরকম কর্মকাণ্ড অন্য হজপালনকারীদের বিরক্তি ও অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সৌদি সরকার বিষয়টি দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণে রেখে অবশেষে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা হজ ভিসায় সৌদি আরবে গিয়ে আর কোন বাংলাদেশী নাগরিককে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেবে না। এটি ধর্মীয় ও সেদেশের আইনসম্মতও নয়। এখন থেকে কেউ এধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সৌদি সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। কোন নেতা হজের আনুষ্ঠানিকতা রেখে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। অভিযুক্ত রাজনৈতিক নেতা যে এজেন্সির হয়ে যাবেন সৌদি সরকার সেই এজেন্সির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। চিঠিতে হজ ভিসায় গিয়ে যাতে কেউ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা রেখে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হন সে জন্য ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে হাব-এর সভাপতি ও মহাসচিব দুজনেই সৌদি আরবে রয়েছেন হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সরকারি সফরে। এ বিষয়ে প্রাক্তন মহাসচিব ও হজ বিশেষজ্ঞ এম রশিদ শাহ সম্রাটের সঙ্গে কথা হলে তিনি চিঠির বিষয়ে ওয়াকিবহাল বলে জানান। বলেন, সৌদি আরবের চিঠি পেয়ে বাংলাদেশ সরকার এনিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। হাবকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে বলে শুনেছি।

No comments

Powered by Blogger.