স্কুল শিক্ষক পান্নার পর এবার সরকারী মহিলা কলেজের এক অধ্যাপকের সাথে ছাত্রীর অনৈতিক সর্ম্পকের ঘটনা নিয়ে কুষ্টিয়ায় তোলপাড় by শামসুল আলম স্বপন

কুষ্টিয়াসহ দেশব্যাপী বহুল আলোচিত সেই লম্পট শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্নার যৌন কেলেংকারীর ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই এবার নিজ প্রতিষ্ঠানেরই এক ছাত্রীর সাথে া সরকারী মহিলা কলেজের এক শিক্ষকের অনৈতিক সর্ম্পকের ঘটনা নিয়ে কুষ্টিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বিবাহিত এবং সন্তানের জনক ওই শিক্ষক সুন্দরী ওই ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার সাথে অনৈতিক সর্ম্পক চালিয়ে এসেছেন। কিন্তু ওই ছাত্রী এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিয়ের প্রস্তাব দিলে  লম্পট ওই শিক্ষক তাদের দীর্ঘদিনের এই প্রণয়ের কথা বেমালুম অস্বীকার করছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে চরম প্রতারণার শিকার ওই ছাত্রী শেষ পর্যন্ত লম্পট ওই শিক্ষকের বিচার চেয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অধ্যক্ষের কাছে লম্পট ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর লিখিত অভিযোগের পর থেকেই কলেজে এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়ে যায়। এ নিয়ে এখন গোটা কুষ্টিয়া জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। এদিকে লম্পট ওই শিক্ষকের বিচার চেয়ে প্রতারণার শিকার ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ করলেও ঘটনার পাঁচ দিন পরও কলেজের অধ্যক্ষ ড. জমির উদ্দিন অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। অভিযোগ উঠেছে  ওই কলেজের উপাধ্যক্ষ মঞ্জুর কাদের আলোচিত এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে লম্পট ওই শিক্ষককে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে কলেজের ছাত্রীরা। বহুল আলোচিত লম্পট ওই শিক্ষক হচ্ছেন কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজেদুর রহমান। কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর এ গ্রেডে উত্তীর্ণ ওই ছাত্রীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবার পর থেকেই লম্পট শিক্ষক সাজেদুর রহমান তার সাথে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তোলেন। প্রাইভেট পড়ানোর সুবাদে উক্ত শিক্ষক তাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে অনৈতিক সর্ম্পক গড়ে তোলেন। কিন্তু কিছুদিন আগে ওই ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর থেকেই লম্পট শিক্ষক সাজেদুর রহমান তার সাথে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। অনেক কষ্টে ওই ছাত্রী শিক্ষক সাজেদুর রহমানের মুখোমুখি হলে তিনি তাদের সর্ম্পকের কথা বেমালুম অস্বীকার করে তাকে চরম অপমান এবং এ নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করলে ফলাফল ভয়াবহ হবে বলে হুমকী দিয়ে তাড়িয়ে দেন। প্রতারণা এবং লাঞ্ছনার শিকার ছাত্রীটি এ ঘটনায় মানষিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় বাড়ি ওই ছাত্রীটি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন টেষ্টের জন্য সেখানে কোচিং করছেন। নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত রাজশাহী থেকে ওই ছাত্রী কুষ্টিয়া এসে গত ২ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষ ড. জমির উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বিচার দাবি করেন। কলেজের অধ্যক্ষ বিচারের আশ্বাস দিয়ে ছাত্রীটিকে দ্রুত কলেজ থেকে বিদায় করে দেন। ছাত্রীর দরখাস্তের বিষয়টি প্রথমে গোপন করে রেখে দেন অধ্যক্ষ। কিন্তু এক কান, দুকান করে বিষয়টি কলেজের শিক্ষক এবং ছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে শেষ পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন না করে কলেজের অধ্যক্ষ ড. জমির উদ্দিন  বিষয়টি ‘মধ্যস্থতা‘ করে দেয়ার জন্য কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মঞ্জুর কাদেরকে দায়িত্ব দেন।

 অভিযোগ উঠেছে লম্পট শিক্ষক সাজেদুর রহমানকে বাঁচাতে উপাধ্যক্ষ মাঠে নেমেছেন। তারা ওই শিক্ষকের পক্ষে এ নিয়ে প্রকাশ্যে বিভিন্ন জায়গায় দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করার পর থেকেই ওই ছাত্রী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে ওই ছাত্রীকে অব্যাহত হুমকী দেয়া হচ্ছে। ছাত্রীর সাথে শিক্ষকের এই অনৈতিক সর্ম্পকের ঘটনার বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু উপাধ্যক্ষসহ কয়েকজন লম্পট ওই  শিক্ষকের পক্ষ নেয়ায় এ ঘটনায় শিক্ষকরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে কলেজে তোলপাড় চলছে। এদিকে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত কলেজের অধ্যক্ষ বাধ্য হয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল মঞ্জুর কাদেরকে সমন্বয় করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেন। ওই কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন,রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মীর মোশারফ হোসেন, বাংলা বিভাগের প্রধান আনসার হোসেন, ইংরেজি বিভাগের প্রধান শিমির কুমার রায় ও হোসনেয়ারা বেগম । গতকাল ৫ কর্ম দিবস অতিবাহিত হলেও তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই।
ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সর্ম্পকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অভিযুক্ত শিক্ষক সাজেদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে ফাঁদে ফেলানোর চেষ্টা করা  হয়েছে। তবে কেন-কি ভাবে তাকে ফাঁদে ফেলানো হলো এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তার দাবি প্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ায় ছাত্রীটি তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছে। কিন্তু মেধাবী ওই ছাত্রী এ গ্রেড পেয়ে পাস করেছে । ফলে লম্পট শিক্ষকের বক্তব্য কারো কাছে গ্রহন যোগ্য হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে লম্পট শিক্ষক সাজেদুর রহমান অকপটে আপনারা নিউজ করে কি করবেন তদন্ত কমিটি আমার পক্ষে।

এ ব্যাপারে কলেজের উপাধ্যক্ষ মঞ্জুর কাদের অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের পক্ষাবলম্বন করে বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। ওই ছাত্রীটি কলেজ থেকে পাস করে বেরিয়ে গেছে। কেন-কি জন্যে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমনটি অভিযোগ করল তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে বলেন, ওই শিক্ষক বর্তমানে খুবই অসুস্থ্য। কয়েক দিনের মধ্যেই চিকিৎসার জন্য কলকাতা যাচ্ছেন। যে কারণে অভিযোগ প্রসঙ্গে এখনো পর্যন্ত তার কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়নি।  একটি সুত্র দাবি করেছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তদন্ত কমিটি ওই লম্পট শিক্ষককে নির্দোষ প্রমান করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

সম্প্রতি কুষ্টিয়া শহরতলীর বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্না একাধিক ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সাথে যৌন সর্ম্পক স্থাপন করে গোপনে সে দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে রাখে। একই ভাবে তার ঘনিষ্ট বন্ধু কয়েকজন প্রকৌশলীকে দাওয়াত করে নিয়ে এসে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্যও গোপনে ধারণ করে রেখে পরে সেসব দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক লেখালেখি হলে শেষ পর্যন্ত পুলিশ বাধ্য হয়ে উক্ত শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্না ও প্রকৌশলী তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা নিতে বাধ্য হয়ে এবং তাদেরকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে। স্কুল শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্না ও তার প্রকৌশলীর এই যৌন কেলেংকারীর ঘটনাটি শুধু কুষ্টিয়াতেই নেই সারা দেশেই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্নার যৌন কেলেংকারীর ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই এবার ছাত্রীর সাথে আরেক লম্পট শিক্ষক সাজেদুর রহমানের লাম্পট্যের কাহিনী ফাঁস হওয়ায় আবারও কুষ্টিয়া জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সুধীমহল পান্নার মত শিক্ষক নামধারী লম্পট সাজেদুর রহমানেরও অবিলম্বে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.