‘বিচারের নামে হেরা তামাশা করলো’

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী হত্যা মামলার রায়ে অভিযুক্ত বিএসএফ হাবিলদার অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
এ খবর শোনার পর ফেলানীর মা জাহানারা বেগম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার নির্দোষ মাইয়াডারে যে খুন করছে তার ফাঁসি চাইছিলাম। কিন্তুক বিচারের নামে হেরা তামাশা করলো।’

বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেওয়ার খবরে বিস্মিত হয়ে বাবা নুরুল ইসলাম নুরু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ভারতে সাক্ষী দিয়া আইসা আশা করছিলাম বিচার পামু। কিন্তু এ কেমুন বিচার বুঝলাম না। মেয়েডারে চোখের সামনে পাখির মতন গুলি কইরা মারল তার কোনো বিচার হইলো না।’

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভারতের কুচবিহারের ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে জেনারেল সিকিউরিটি কোর্টের বিশেষ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

পরে সংশ্লিষ্ট যথাযথ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পশ্চিম বাংলার প্রতিনিধি মধুপূর্ণা দাস তাকে ফোনে কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকনকে এ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফেলানী হত্যা মামলার শুনানিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের আইনজীবী কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ রায়ে ন্যায়বিচার ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। হত্যাকারীর বিচারের মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা তিরোহিত হলো। এ রায় মানবাধিকারের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং আত্মস্বীকৃত খুনকে বৈধতাদানের শামিল।’

কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, ভারতের বিএসএফের কাছে মামলার রায়ের ব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগ করে বিষয়টি জানান চেষ্টা করা হলেও এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তিনি আরো জানান, শুনানীর সময় আসামি পক্ষ নানাভাবে কনটাডিকশন তৈরির চেষ্টা করলেও ফেলানীর বাবা ও মামা সঠিকভাবে সাক্ষ্য দেওয়ায় আশা করা হয়েছিল আসামির সব্বোর্চ সাজা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের সোনারী এলাকায় বিএসএফের উদ্যোগে গঠিত একটি বিশেষ আদালতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ৫ সদস্যের বিচারক মণ্ডলির সভাপতিত্ব করেন, বিএসএফর গৌহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি সিপি ত্রিবেদী। বিচারের প্রথম দিন গত ১৩ আগস্ট মামলার নথিপত্র জমাসহ একমাত্র আসামি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের জবানবন্দি নেওয়া হয়।

অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় (অনিচ্ছাকৃত খুন) এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

গত ১৯ আগস্ট আদালতে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আব্দুল হানিফ সাক্ষ্য দেন। এ বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক খালেদ এবং কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন।

No comments

Powered by Blogger.