ঐশীর দুই বন্ধু যে কোনো সময় গ্রেফতার by ইমরান আলী

চাঞ্চল্যকর পুলিশ দম্পত্তি হত্যাকান্ডের ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন জনি ও সাইদুল যে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারে। তবে সাইদুলের আগে জনি গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বাংলানিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গ্রেফতার অভিযানে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, জনির অবস্থান সম্পর্কে আমরা অনেকটাই ধারনা পেয়েছি। সেই অবস্থানকে ঘিরে আমাদের অভিযান হচ্ছে। আমরা ঝুঁকি নিতে চাই না। এ কারণে আমাদের জানা সেই অবস্থান সে রয়েছে কি না তা যাচাই বাছাই চলছে।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জানা মতে জনি স্বস্ত্রীক অবস্থান করছে। ঘটনার দিন সে পালিয়ে ওই অবস্থানে চলে যায়। বর্তমানে আমরা তার অবস্থানের খুব কাছাকাছি। যে কোন মুহুর্তে আমরা চাঞ্চল্যকর এই মামলার অন্যতম এই আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।

এদিকে অন্য সন্দেহভাজন আসামি সাইদুলও আটক হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা বলেন, দু’এক দিনের মধ্যে পলাতক এই দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা দম্পত্তির মেয়ে ঐশী রহমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পরপরই গোয়েন্দা পুলিশ তার উপর নজরদারী শুরু করে। এক পর্যায়ে লাশ উদ্ধারের পরের দিন শনিবার দুপুর ২ টার দিকে পল্টন থানায় সে আত্মসমর্পন করে।

এরপর জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী গোয়েন্দা কর্মকর্তদের নিকট ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে জানায়। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ট বন্ধুরাও জড়িত বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিকট তথ্য দেয়।

এই বন্ধুদের মধ্যে ড্যান্স পার্টনার মিজানুর রহমান রনিকে পুলিশ শনিবার আটক করে। অন্য দুই বন্ধু জনি ও সাইদুলকে এখনো আটক করতে পারেনি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিকট ঐশীর  দেয়া তথ্য মতে তার বখে যাওয়ার পেছনে জনির হাত ছিল। জনিই তাকে মাদক থেকে শুরু করে অন্ধকার জগতে প্রবেশ করায়। এরপর পরিবার থেকে ঐশীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে চাপ প্রয়োগ করা হয়।

এক পর্যায়ে ঐশী পরিবারের এই চাপ জনিকে বলে। জনি সেই সময় ঐশীকে মা-বাবাকে খুন করার উপদেশ দেয়। আর তাতে তারা সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেয়। এরপর থেকে মূলত ববা-মাকে হত্যার পরিকল্পনা করতো।

ঐশীর দেয়া তথ্য মতে, যে চেতনানাশক নাইটাস ট্যাবলেট খাইয়ে বাবা-মাকে অচেতন করে ঐশী- সেটি জনি তাকে এনে দেয়। পাশাপাশি হত্যার দিন ঐশীর সঙ্গে জনি ও সাইদুলও বাসায় থেকে ঐশীর সঙ্গে হত্যাকান্ডে অংশ নেয়।

পরবর্তীতে ঐশীকে বিদেশে পালাতে সাহায্য করার জন্য জনি ঘটনার দিন ঐশীকে বার বার ফোন দেয়। কিন্তু ঐশী এ সময় তার অপর বন্ধু পারভেজকে বিষয়টি খুলে বললে পারভেজ তাকে আত্মসমর্পণের জন্য অনুরোধ করে। এক পর্যায়ে ঐশী তার কথামত পল্টন থানায় আত্মসমর্পন করে। 

ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশ পারভেজকেও আটক করলেও পরে তারে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

পুলিশের নিকট পারভেজ জানায়, জনি ও সাইদুলের কথামত ঐশী তাদের সঙ্গে দেখা করলে তারা ঐশীকে হত্যা করার আশঙ্কা ছিল।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য পাওয়ার পর থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম জনি ও সাইদুলকে আটকের জন্য হন্য হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাদের যে কোন মুহুর্তে আটক হতে পারে বলে জানায়।

এর আগে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জনি ও সাইদুলের ছবি দিয়ে দেশের বিমান বন্দর, স্থল বন্দর এবং নৌ বন্দরে তাদের দেশত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানায়, ঐশীর এই দুই ঘনিষ্ট বন্ধু সাইদুলের বাড়ি বাসাবো এলাকায় আর জনির বাড়ি বাড্ডা এলাকায়। তারা দু’জনেই মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর চামেলীবাগরে ভাড়া বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) পরির্দশক (ইন্সপেক্টর) মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানরে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরে তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পায় তাদের কন্যা ঐশী রহমানের। শমিবার দুপুরে ঐশী রহমান পল্টন থানায় আত্মসর্মপন করে। পুলিশ ওই বাসার কাজরে মেয়ে সুমি ও ঐশীর ঘনিষ্ট বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে আটক করে। বর্তমানে তারা রিমান্ডে গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.