৯ম শ্রেণীতে উঠে আর স্কুলে যায়নি ঐশী by কাজী সুমন

২০১০ সালে রাজধানীর অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণী পাস করে খুন হওয়া পুলিশ পরিদর্শক দম্পতির কন্যা ঐশী রহমান।
নবম শ্রেণীতে উঠে আর পড়াশোনা করেনি সে। যোগাযোগ করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াকালেই পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে উঠে সে। নিয়মিত ক্লাসও করতো না। ফলে পরীক্ষায়ও ভাল ফল করতে পারেনি। রাজধানীর অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঐশী রহমান ৮ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে ২০১০ সালের ৯ই জুন অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হয়। ভর্তির পর এক বছর পড়াশোনা করে। এরপর অষ্টম শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করে সে। ২০১১ সালে নবম শ্রেণীতে উঠে আর ক্লাস করেনি। স্কুলের সঙ্গে কোন রকম যোগাযোগও রাখেনি। তাই ২০১১ সালের পর থেকে ঐশী রহমান অক্সফোর্ড স্কুলের শিক্ষার্থী নয় বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। ঐশীর পারিবারিক সূত্র জানায়, এরপর ও-লেভেল কমপ্লিট করার জন্য ঐশীকে বৃটিশ কাউন্সিলে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেন তার পিতা-মাতা। বেপরোয়া জীবন-যাপন করার কারণে বৃটিশ কাউন্সিলের ক্লাস-পরীক্ষায় অনিয়মিত হয়ে পড়ে সে। ফলে সেখান থেকেও আর ও-লেভেল শেষ করতে পারেনি। এদিকে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত মাদকে আসক্ত হয়ে বখে যাওয়ার কারণেই আর পড়াশোনা করেনি ঐশী। পড়াশোনা বাদ দিয়ে ইয়াবা আর ছেলে বন্ধুদের নিয়ে বেপরোয়া জীবন-যাপন শুরু করে সে। ঐশীর অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার কারণে পিতা-মাতা শত চেষ্টা করেও তাকে আর স্কুলে পাঠাতে পারেননি। সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে ঐশী এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে অত্যন্ত দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের হেড অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফাংশনাল অ্যাফেয়ার্স শহীদুল আলম মঞ্জুর। তিনি মানবজমিনকে বলেন, ঐশী রহমান অল্প সময় আমাদের স্কুলে পড়াশোনা করেছে। আমাদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস করতো খুব কম। প্রায় সময়ই ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতো। প্রতি মাসেই ঐশীর অভিভাবককে ডেকে তার অনুপস্থিতির ব্যাপারে অবহিত করেছি। তাকে নিয়ে আমরা কাউন্সিলিং করেছি। শহীদুল আলম আরও জানান, আমাদের স্কুলে পড়াকালে ঐশীর স্বাভাবিক আচরণ ছিল। কোন ধরনের মাদকে আসক্ত ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। তবে ছাত্রী হিসেবে ঐশী এতটা খারাপ ছিল না। প্রতিটি ক্লাস পরীক্ষায় মোটামুটিভাবে পাস করতো। অষ্টম শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছিল। তবে নবম শ্রেণীতে উঠে আর ক্লাস করেনি। এরপর আমরা ঐশীর অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কোন রেসপন্স করেননি। তিনি বলেন, ঐশীর এ ধরনের আচরণ খুবই দুঃখজনক। মেয়ে হয়ে পিতা-মাতাকে হত্যা করা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত। অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পক্ষ থেকে আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি। এদিকে ঐশীর ঘটনা জানাজানির পর অক্সফোর্ড স্কুলের ঐশীর সহপাঠীদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। স্কুল ছুটি থাকলেও দাপ্তরিক কাজে আসা ঐশীর এমন কয়েকজন সহপাঠী জানান, ঐশীর কাণ্ডে তার লজ্জিত ও মর্মাহত। সহপাঠী হিসেবে ঐশীর পরিচয় দিতে লজ্জা হয় বলে জানান তারা। গত ১৬ই আগস্ট বিকালে রাজধানীর পল্টন থানার চামেলীবাগের ভাড়া বাসা থেকে বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই সন্তান ঐশী ও ঐহী  এবং গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন তারা। বাবা-মার লাশ উদ্ধারের পরদিন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে ঐশী। তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে ঐশীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।

No comments

Powered by Blogger.