ড. ইউনূস কৌশলী রাজনীতিবিদের ভূমিকায় by ওয়েছ খছরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই গ্রামীণ ব্যাংক ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক এটা ড. ইউনূস নিজেই চান না। আর এ কারণে নিজে এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হতে না পেরে একের পর এক ষড়যন্ত্র  চালাচ্ছেন। এই ষড়যন্ত্র অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস সম্মানিত লোক। তাকে আমিই গ্রামীণ ব্যাংক দিয়েছিলাম। কিন্তু সম্পূর্ণ নীতিবর্জিত হয়ে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান হিসেবে পদ দখলে রাখেন। রিভিউ কমিটি গঠনকালে ড. ইউনূস কোন বাধা না দিলেও পরবর্তীতে ওই কমিটি ব্যাংকের ভেতরে তার একক আধিপত্যের বিষয়টি যখন প্রমাণ করে তখন তিনি নিজেই আদালতে যান এবং আদালতের নির্দেশে তিনি পদত্যাগ করেন।’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ মুহূর্তে তিন দিনের সফরে সিলেটে রয়েছেন। সফরকালে তিনি গতকাল বিকাল ৫টায় সিলেট সার্কিট হাউসে জরুরি প্রেস ব্রিফিং করেন। আর এই প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি ড. ইউনূসের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। অর্থমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিংয়ের লিখিত বক্তব্যের শুরুতে মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত ড. ইউনূসের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দেন। উদ্ধৃতিটি হলো ‘যারা গ্রামীণ ব্যাংক ভাঙতে চায়, দেশের মানুষ ও নাগরিকদের প্রতি তাদের মমত্ববোধ নিয়ে প্রশ্নই ওঠে। তাদের হাতে কি দেশ তুলে দেয়া যায়?’ বুধবার ড. ইউনূস তার গুণগ্রাহী সংগঠন ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতাদের এ কথা বলেছেন বলেও অর্থমন্ত্রী জানান। লিখিত বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার ব্রতটি অধ্যাপক ইউনূস নিজেই আজ দু’ বছর ধরে বহাল রেখেছেন। তার অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। গত জুন মাস থেকেই তিনি অনবরত এই বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। ২৬শে জুন বিষয়টি জাতীয় সংসদেও আলোচিত হয় জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯ টুকরা করার যে অভিযোগ অধ্যাপক ইউনূস করেছেন তা সত্য নয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে নিয়ে গর্ববোধ করে। এর ক্ষতি কখনও সরকার করতে পারে না। একটি কমিশন তাদের কি সুপারিশ করেছে সেটি দিয়ে সরকারের সামগ্রিক ধারণা বিচার করা ঠিক নয়। গ্রামীণ ব্যাংকের মৌলিক কাজ ও পদ্ধতি যেমন আছে তেমনই চলবে বলে জানান তিনি। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি অধ্যাপক ইউনূসের উদ্যোগে সরকারই সমুদয় টাকা দিয়ে ১৯৯৩ সালে এইটি আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করে। তখন ইউনূসকে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। গ্রামীণ ব্যাংক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান এবং এর প্রথম পরিচালনা পর্ষদ সরকারই গঠন করে। গরিব ঋণগ্রহীতাদের ৪০ শতাংশ শেয়ার সামর্থ্যমতো গ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়। পরে ওই শেয়ার ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা হয় এবং আজও সেই অবস্থা রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক বিকেন্দ্রায়িত উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকে গত দুই বছরে কোন পরিবর্তন করা হয়নি এবং ভবিষ্যতেও করা হবে না। কারণ ব্যবস্থাটি ভাল চলছে, তাতে সুফল পাওয়া গেছে। এ প্রতিষ্ঠানে সরকার বর্তমানে চেয়ারম্যান সহ তিনজন সদস্য নিয়োগ করে। সেই ব্যবস্থাই বহাল আছে। অর্থমন্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশী সংবাদ মাধ্যমে কথা ওঠার পর সরকার একটি রিভিউ কমিটি গঠন করে। আর তখন দেখা যায় অধ্যাপক ইউনূস নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ১৯৯৯ সাল থেকেই সেখানে অবস্থানটি আইনসম্মত নয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তখন আমি প্রস্তাব দেই ড. ইউনূস পদত্যাগ করলে তাকে ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার একটি চিরস্থায়ী ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। কিন্তু তখন ড. ইউনূসের বিকল্প প্রস্তাব হলো তাকেই চেয়ারম্যান বানাতে হবে। আর সেটি না হওয়ায় তিনি আদালতে গেলেন ও আদালতের রায় অনুযায়ী পদত্যাগ করলেন।’ অর্থমন্ত্রী অভিযোগ করেন এরপর থেকে ড. ইউনূস তার তরফ থেকে ব্যাংকটি অকার্যকর করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রথমেই বলা হলো, সরকার গ্রামীণ ব্যাংক দখল করে মহিলাদের অধিকার কেড়ে নিতে চান। আরও প্রচারণা হলো গ্রামীণ ব্যাংকে যে আমানত আছে সেটি সরকার খেয়ে নেবে। এসব প্রচারণাই গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, অধ্যাপক ইউনূস ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক হয়ে প্রায় বছরখানেক গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা করেন। তার অবসর গ্রহণের পর একজন সাময়িক নির্বাহী পরিচালক নিযুক্ত করতে হয়। গ্রামীণ ব্যাংক নতুন পরিচালক নিয়োগের জন্য যে পদ্ধতি প্রচলিত ছিল সেটি ইউনূস নষ্ট করে দেন বলে অভিযোগ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছেন যে সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করতে চায়। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস অত্যন্ত কৌশলী রাজনীতিবিদ। তবে তিনি রাজনীতিবিদদের পোশাকটা পরতে চান। এখন তিনি যা করছেন তা একান্তই রাজনীতিবিদদের কাজ এবং সম্পূর্ণভাবে নীতিবর্জিত এবং গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার একটি উদ্যোগ।’ এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়টি নিয়ে সমাধান ইউনূস নিজেও চান না। নতুবা তিনি এ ষড়যন্ত্র করতেন না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান বিরোধী দল বিএনপিরও কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। তারা একটা ইস্যু খুঁজছে। আর ইস্যুর মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন বিএনপির সময় হয়নি। বিএনপি সব সময় নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছে। জিয়াউর রহমানও হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের কর্তৃত্ব বাড়ান। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাতে বিশ্বাস করে না। এ কারণে আওয়ামী লীগের সময় সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোন একটা আলোচনা হবে। দর কষাকষিও হবে। এ কারণে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোন আশঙ্কা নেই। সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ সহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.