তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করব by এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন

কালের কণ্ঠ : পুনরায় নির্বাচিত হলে রাজশাহীর উন্নয়নে কী পরিকল্পনা রয়েছে?
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন : নির্বাচিত হলে রাজশাহীকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করব। সেই সঙ্গে যেসব অঙ্গীকার এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করব।
আমি একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও শান্তিময় রাজশাহী গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে যা যা করার দরকার, তা-ই করব। ভিশন ২০১৮ বাস্তবায়নে আরেকবার ক্ষমতায় আসতে জনগণের রায় দরকার। আমার বাবা এ দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আমি সেই বাবার সন্তান হয়ে রাজশাহীবাসীর জন্য কিছু করতে চাই। সে কারণেই আমি এবারও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। রাসিক নির্বাচনে বিজয়ী হলে চলমান উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ২৫ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করব। ইশতেহারে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কাজ বাস্তবায়ন, তরুণদের জন্য 'আইটি ভিলেজ' স্থাপনের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন, নতুন করে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, নতুন দুটি আবাসিক এলাকা তৈরি, মহানগরীতে কয়েকটি আধুনিক বাজার নির্মাণ, পদ্মার পাড়ে নির্মিত ছয়টি বিনোদন স্পটের কাজ সম্পন্নকরণ, রাজশাহী-ঢাকা রুটে নতুন আন্তনগর ট্রেন ও রাজশাহী-চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ সম্প্রসারণ করা হবে।
কালের কণ্ঠ : কেন এবারও জনগণ আপনাকে নির্বাচিত করবে বলে মনে করেন?
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন : আমার মুখের কথায় নয়, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখেই জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত করবে। আমি রাজশাহীবাসীর উন্নয়নের জন্য বিগত পৌনে পাঁচ বছরে সাড়ে চার শ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। রাজশাহীকে একটি আধুনিক শহরে রূপান্তর করেছি। ফলে আজকের রাজশাহীর সঙ্গে আগের রাজশাহীর অনেক গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। নগরীতে এসেছে বাড়তি সৌন্দর্য। পদ্মার বাঁধকে বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত করেছি। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। রাজশাহীতে বহুপ্রতীক্ষিত গ্যাস পাওয়া গেছে। এখন আরো উন্নয়ন হবে। গড়ে উঠবে কলকারখানাসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ১৪টি বহুতল ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা হয়েছে। এরই মধ্যে চারটি ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। এটিও নগরীতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এসব কারণেই জনগণ আমাকে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত করবে বলে মনে করি।
আগামী দিনের চলার পথ অনেকটাই সুগম করে ফেলেছি। সিটি করপোরেশনের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছি। প্রশাসনিক অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে সেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি। সিটি করপোরেশনের আয় আগের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করছে। ২০০৮ সালের আগে এই পরিস্থিতি ছিল না। বিশৃঙ্খল-ভঙ্গুর অবস্থায় দায়িত্ব নিয়ে আমি সিটি করপোরেশনকে নাগরিকদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছি। আমি যা অঙ্গীকার করেছি, তা রাজশাহীবাসীকে নিয়ে সফল করেছি। বাকি যেসব কাজ চলমান বা করতে হবে, তা নগরবাসীকে নিয়ে বাস্তবায়ন করতে চাই। রাজশাহীতে গ্যাস সংযোগ সেই প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছে।
কালের কণ্ঠ : রাজশাহী মহানগরীতে গ্যাস সংযোগ কি কোনো প্রভাব ফেলবে এই নির্বাচনে?
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন : নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে গ্যাস উদ্বোধন হলেও এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বরং তারা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে। কারণ রাজশাহীতে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে জ্বালানি একটি বড় সমস্যা ছিল। রাজশাহী গ্যাস সঞ্চালন লাইন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সেই সমস্যা দূর হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গ্যাস আসবে না বলে বিএনপি নেতারা অনেক অপপ্রচার চালিয়েছেন; কিন্তু গ্যাস ঠিকই এসেছে। নগরবাসী তাদের প্রতীক্ষিত গ্যাস পেয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ যাবে। বিএনপি নেতারা নগরবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা ছিল মিথ্যা। কিন্তু আমি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার বাস্তবায়ন হয়েছে। তাই তাঁদের অপপ্রচারে কান না দিয়ে আগামী দিনে আমার তালা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
কালের কণ্ঠ : এ মহানগরীর নাগরিকদের জন্য আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন : হতদরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে; বিশেষ করে বস্তিবাসীদের বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পয়োব্যবস্থা আরো উন্নত ও আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর জন্য প্রয়োজন নগরবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন, ভালোবাসা ও সহযোগিতা। আসন্ন নির্বাচনে সব শ্রেণীর মানুষের রায় চাই। আমার জীবনের লব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা, যোগ্যতা ও ভালোবাসার সবটুকু ঢেলে দিয়ে রাজশাহীর উন্নয়নে নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই। রাজশাহীর মানুষের জন্য আমার হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা নগরীর দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখেই প্রমাণ পাওয়া যায়। আমি পুনর্বার মেয়র নির্বাচিত হলে রাজশাহীতে শিল্পায়ন, আইটি ভিলেজ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দেব।
কালের কণ্ঠ : রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলুন।
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন : বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের কারণে শান্তির নগরী রাজশাহী অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। আমরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করি না বলে এখনো সেই শান্তি অব্যাহত আছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করছে। রগ কেটে বহু মানুষকে পঙ্গু করে দিয়েছে। আমরা সমাজে হেফাজতি নৈরাজ্য চাই না। আমাদের নারীরা মান-সম্মান ও সম্ভ্রম নিয়ে যাতে সমাজে বসবাস করতে পারেন, তার পক্ষেই রায় দিতে হবে। বিএনপি জামায়াত ও হেফাজতিদের সঙ্গে নিয়ে দেশকে পেছনের দিকে নিতে চায়; কিন্তু গণতন্ত্রমনা মানুষ সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দেবে না। মহানগরীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন : আপনাদেরও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.