আস্থাহীনতার কারণেই তত্ত্বাবধায়কের প্রয়োজন হয়েছিল

বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যকার সংলাপকে এই মুহূর্তে জরুরি বলে উল্লেখ করে বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, 'রাজনীতিবিদদের আস্থাহীনতার কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়েছিল।'
তিনি বলেন, 'বর্তমানে বিরোধী দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো সেই আস্থাহীনতা রয়েছে। আর এ জন্যই বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন করছে।' তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ প্রয়োজন। কিন্তু সংলাপ আয়োজনেও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এই সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে উঠে যত শিগগির সম্ভব সরকার ও বিরোধী দলকে আলোচনায় আসতে হবে।' তিনি বলেন, 'চূড়ান্ত বিবেচনায় দুই পক্ষকেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে
যেতে হবে।'
গত সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের সংবাদ পর্যালোচনা ভিত্তিক টক শো নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মনজুরুল আহসান বুলবুল এ কথা বলেন। সাংবাদিক গোলাম মোর্তজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাবেক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক গোলাম মোর্তজা আলোচকদের কাছে জানতে চান, 'বিএনপি তো তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে আন্দোলন করছে। সরকারও তাদের সংসদে এসে আলোচনার কথা বলেছে। কিন্তু বিএনপি সংসদে গিয়ে মুলতবি প্রস্তাব দিয়ে আবার প্রত্যাহার করল কেন?'
জবাবে সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর বলেন, 'এটা কোনো বিষয় না। সরকার চাইলে সংসদের বাইরেও আলোচনা হতে পারে।' তিনি বলেন, 'সংলাপ নিয়ে তো সরকারের একেক মন্ত্রী একেক কথা বলেন। এতে বোঝা যায়, সরকার একদিকে সংলাপের কথা বললেও অন্যদিকে তারাই সময়ক্ষেপণ করছে।' তিনি বলেন, 'আসলে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে সরকারকেই ফর্মালি আলোচনার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে হবে।' তিনি আরো বলেন, 'বিরোধী দল প্রস্তাব দিলে তো তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এ জন্য বিরোধী দলের সংসদে কোনো প্রস্তাব দেওয়া আর না দেওয়া সমান।' তিনি বলেন, 'সরকার দুটি কারণে সংলাপ চাইছে না। একটি হলো সংসদে সরকারি দলের অ্যাবসল্যুট মেজরিটি, অন্যটি হলো তারাই এখন দেশ চালায়।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা- এর মধ্যে কোনটি বিরোধী দল বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ? এ নিয়ে আসলে সমাধানের জায়গাটা কী?
জবাবে সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, 'বিরোধী দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে। কিন্তু বর্তমানে সাংবিধানিকভাবে তার কোনো সুযোগ নেই। তাই আলোচনার মাধ্যমেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে আসতে হবে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে এক দর্শক আলোচকদের কাছে জানতে চান, সরকার নাশকতার আশঙ্কায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এটা কি মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার সমান নয়?
জবাবে সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর বলেন, 'অবশ্যই। সরকার তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক আলোচকদের কাছে জানতে চান, 'সরকার তো বলছে, তারা সাড়ে পাঁচ হাজার নির্বাচন করেছে এবং সব কয়টিই নিরপেক্ষভাবে করতে পেরেছে। যার জন্য চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি এখন এ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাতে কি মনে হয় না সরকার এ থেকে একটা অ্যাডভান্টেজ নিতে পারে যে এ সরকারের অধীনে বা এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাই বিরোধী দলের এ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচনে আসতে বাধা কোথায়?'
জবাবে সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর বলেন, 'হতে পারে যে নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বিএনপি নমনীয়। কিন্তু মনে হয় না সরকারের ব্যাপারে নমনীয় হবে। তা ছাড়া স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে তো আর জাতীয় সরকার পরিবর্তন হয় না। এ জন্য সরকার ও বিরোধী দলকে একটি সিদ্ধান্তের জায়গায় পৌঁছতে হবে।'
এ সময় আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, 'সুষ্ঠু নির্বাচনের একটি দিক হচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা ফলাফল মেনে নেন কি না। আর সে জন্য চারটি সিটি নির্বাচন বিরোধী দলের জন্য টেস্ট কেস। এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জিতলে বিএনপি বলবে সরকারের জনসমর্থন নেই। আর হারলে বলবে সরকার কারচুপি করেছে।'

No comments

Powered by Blogger.