টিকফা চুক্তি অনুমোদন-বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে এগিয়ে নিক

প্রায় এক যুগ ধরে অনেক আলাপ-আলোচনা, অনেক দেন-দরবারের পর অবশেষে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে টিকফা চুক্তি তথা ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট।
মন্ত্রিসভায় গত সোমবার চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী মাসেই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়ে যাবে। কিন্তু এরই মধ্যে আমাদের বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে নানা রকম যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
সব কিছুরই পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি থাকে এবং থাকবেই। সব কিছু নিয়েই ডিবেট বা বিতর্ক করা যায় এবং করা হয়ও। বিতর্ক হওয়া ভালো এবং বিতর্কের ভেতর দিয়ে সঠিক ও সবচেয়ে যৌক্তিক অবস্থানটি বেছে নেওয়া যায়। তবে তা শুধু বিতর্কের জন্য বিতর্ক কিংবা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতার রূপ নিলে সেটি কাম্য হবে না। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে চুক্তির যেসব বিষয় নিয়ে দেন-দরবার হয়েছে- তা যেমন ছিল হাস্যকর, তেমনি ছিল অপ্রয়োজনীয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি, যদিও বাংলাদেশ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের অনুস্বাক্ষরকারী দেশ। তাহলে আমরা কি দেশ থেকে দুর্নীতির অবসান চাই না? আর দুর্নীতি না কমানো গেলে বাণিজ্য-বিনিয়োগ এগোবে কী করে? গত এক বছর এই প্রক্রিয়া আটকে ছিল জাতিসংঘ স্বীকৃত শ্রমিক অধিকার প্রদানের বিষয়ে। যুক্তরাষ্ট্র এর পূর্ণ বাস্তবায়নের পক্ষে ছিল। বাংলাদেশ চেয়েছিল তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে। যা হোক, শেষ পর্যন্ত সব মতভেদের অবসান হয়ে বিষয়টি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ; বিশেষ করে পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। এত দিন বড় দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র একাই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিত। এ চুক্তির মাধ্যমে একটি নিয়মিত ফোরাম তৈরি হচ্ছে, যেখানে পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। এটিকে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই।
বিদগ্ধজনরা বলেন, কেবল অবিশ্বাস নিয়ে এগোনো যায় না, জীবনও চলে না। ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও। আমাদের এগোতে হবে। ছায়াশত্রুর কল্পনা থেকে চলাটাই বাদ দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। চুক্তির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'যেকোনো পক্ষ অপর পক্ষকে লিখিত নোটিশ প্রদান করিয়া যেকোনো সময় এই চুক্তিটির অবসান ঘটাইতে পারিবে।' চুক্তির কারণে কোনো সমস্যা তৈরি হলে চুক্তি বাতিল করার কিংবা সংশোধন করার এখতিয়ার তো থাকলই। অযথা চুক্তি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো কিংবা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করাটা কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.