'ভোটারদের উন্নয়ন বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল'

সম্প্রতি হয়ে যাওয়া চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের সরকারের ব্যাপক উন্নয়নকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'আমরা ভোটারদের সুচিন্তিত রায়কে অভিনন্দন জানাই। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরকার যে উন্নয়ন করেছে, তা নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে পারত। কিন্তু ভোটাররা তা বিবেচনায় নেয়নি।' তিনি বলেন, 'এত বড় চারটি সিটির নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি হয়নি। অথচ ঢাকায় বসে বিএনপির মহাসচিব বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুললেন।' তিনি বলেন, 'বিএনপি জিতলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলবেন, আর আওয়ামী লীগ জিতলে বলবেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এটা তো ঠিক না।'
সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সমসাময়িক বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠান টক শো 'মধ্যরাতের মুক্তবাক' অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো ও সাপ্তাহিকের সম্পাদক সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা।
আলোচকরা চারটি সিটি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর জয়-পরাজয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, 'চারটি সিটির নির্বাচনে সরকারি দল বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলো। অথচ সরকার ওসব এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছে। রাজশাহীতে গ্যাস দিয়েছে, বরিশালে রাস্তাঘাটের ব্যাপক সংস্কার হয়েছে, অনেক অনেক উন্নয়ন। তার পরও কেন সরকারি দলের প্রার্থীদের এত বড় ভরাডুবি?'
জবাবে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী বলেন, 'এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীরা পরাজিত হলেও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। তা হলো, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।' তিনি বলেন, 'এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন এ সরকারের অধীনে অংশ নিতে পারবে না?'
আলোচনার এ পর্যায়ে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বলেন, 'নির্বাচনে ভোটাররা সরকারের উন্নয়ন কী আমলে নেবে, আসলে এ নির্বাচনে ধর্মীয় সুড়সুড়ি কাজ করেছে। নির্বাচনে ভারতবিরোধিতা, হিন্দুবিদ্বেষ, বিভিন্ন বিষয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।' তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগকে যেমন তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কিছুটা ছাড় দিতে হবে, তেমনি বিএনপিকেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতকে ছাড়তে হবে।' তিনি বলেন, 'ধর্মীয় দলগুলো বিএনপির ওপর ভর করেছে।' রনো বলেন, ধর্মীয় সুড়সুড়ি খারাপ। দলনিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা কি হয়েছে, হয়নি। হয়েছে সম্পূর্ণ দলীয় নির্বাচন।'
আলোচনার এ পর্যায়ে অংশ নিয়ে সাপ্তাহিকের সম্পাদক সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা বলেন, 'আপনারা রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম রাখবেন, আর ইসলামের কথা বলে ভোট চাইলে বলবেন সাম্প্রদায়িক, এটা জনগণ মানবে না। কারণ এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তাদের কাছে ধর্মটাই বড়।' তিনি বলেন, জনসমর্থনের জায়গা থেকে বললে, হেফাজত কোনো বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ যদি চার সিটিতে নির্বাচনে পরাজয়ের প্রকৃত কারণ খুঁজতে ভুল করে, তবে আগামী নির্বাচনে চরম মূল্য দিতে হবে।' তিনি বলেন, 'একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না। আর তা হলো, বিএনপি বা আওয়ামী লীগ এ দেশে দুটি বড় দল। এর যেকোনো একটি দল যদি নির্বাচনে না আসে, তবে সেই নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এ বিষয়ে সরকার যতই বলুক, তার পক্ষে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না।' তিনি বলেন, 'বিএনপিকে আস্থায় না আনতে পারলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।' তিনি আরো বলেন, 'সরকার যা-ই বলুক, অনেক সময় দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সংবিধান কেন, অনেক কিছুই পরিবর্তন করা যায়। সরবকারের সম্ভবত সে রকম কিছুই করা উচিত হবে আগামীতে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে।'

No comments

Powered by Blogger.