প্রচারণায় ৪০ লাখ লিফলেট by মহিউদ্দীন জুয়েল

লংমার্চকে ঘিরে ব্যাপক প্রচারণায় নেমেছে হেফাজতে ইসলাম। লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন কিংবা পোস্টার-সবকিছুই ছাপানো হচ্ছে দিন-রাত। আর এই সংখ্যাটা ৪০ লাখের কম নয় বলে মানবজমিনের কাছে নিশ্চিত করেছেন দলটির একাধিক নেতা।
বলেছেন, কেবল লংমার্চ নয়, নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি দাবি, ইসলাম রক্ষার আন্দোলনে এসব প্রচারণা অব্যাহত থাকবে। সরজমিন গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি ছাপাখানায় গিয়ে লাখ লাখ লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসব প্রচারণার 
ভাষা লেখা হয়েছে ছোট ছোট বাক্যে। বেশির ভাগ প্রচারণায় লেখা হয়েছে ‘নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি চাই’। তবে কোথাও যুদ্ধাপরাধ অপরাধে বন্দি জামায়াত নেতাদের মুক্তি চাওয়া হয়নি।
চট্টগ্রামের হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, দেশের ৬৪ জেলার সব ক’টি থেকেই আঞ্চলিক নেতা-কর্মীরা ব্যানার, পোস্টার ছাপাচ্ছেন। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে তাদেরকে বলা হয়েছে। তবে সব লিফলেট, ব্যানারের ভাষা কি তা নির্ধারণ করেছেন দলটির প্রধান নেতা আল্লামা আহমদ শফী। ভাষা লেখার ক্ষেত্রে কোথাও যাতে দলের অবস্থান হালকা না হয়ে যায় সেদিকে অধিক নজর দেয়া হয়েছে।
লংমার্চকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ছাপা হয়েছে ১৬ লাখ লিফলেট, ১৪ লাখ পোস্টার। এছাড়া, আরও ১০ লাখ ব্যানার, ফেস্টুন, স্টিকার ছাপানোর কাজ চলছে। আজকালের মধ্যে সেগুলো ছাপা সম্পন্ন হবে। ঢাকায় লংমার্চের সমাবেশে যাতে সবাই যোগদান করেন সে জন্য গতকাল চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এসব লিফলেট বিতরণ শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, অফিসপাড়া, আদালত, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, জনসমাগম হয় এমন অবস্থানে দলে দলে চলছে লিফলেট বিতরণ। অন্যদিকে পোস্টার সাঁটানোর কাজটি করছেন দলের তৃণমূল কর্মীরা।
৪ রংয়ের এসব লিফলেট, পোস্টার নজর কেড়েছে নগরবাসীর। সবখানেই প্রাধান্য পেয়েছে দলের ১৩ দফা। এসব দফার কথা সংবলিত বাণীই লিফলেট, পোস্টারে ঠাঁই পেয়েছে বলে দেখা গেছে।
বেশির ভাগ লিফলেট ও পোস্টারের স্লোগানগুলো হচ্ছে- ‘কুলাঙ্গার ব্লগার/শাস্তি দরকার’, ‘সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস পুনঃস্থাপন কর/ কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সকল আইন বাতিল কর’, ‘ইসলাম ধর্মের অবমাননা/সংসদে আইন চাই’, ‘শাহবাগে হচ্ছে কি?/নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ/জাতি সব জানে কি’, ‘ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল কর/করতে হবে’, ‘মসজিদে নামাজ আদায়ের নিরাপত্তা চাই’, ‘ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে’, ‘মিডিয়ায় দাড়ি-টুপির ব্যঙ্গাত্মক নাটক সিনেমা আর কত’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও তৎপরতা বন্ধ কর’, ‘রাসুলপ্রেমিক আলেম-ওলামা-ছাত্রদের ওপর নির্যাতন/চলবে আর কত দিন’, ‘সারা  দেশের কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে’, ‘অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত আলেমদের ছাড়তে হবে’।
হাটহাজারী মাদরাসার একটি সূত্র জানায়, লিফলেট ও পোস্টার প্রচারণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৬ই এপ্রিল লংমার্চ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা শেষে কৌশল নির্ধারণ করেন উপস্থিত নেতারা।
এতে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর শামসুল আলম, মাওলানা তাজুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব লোকমান হাকিম, সলিম উল্লাহ, মীর খলীলুর রহমান মাদানী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহীসহ একাধিক নেতা।
বৈঠকে লংমার্চ সমন্বয় কমিটির নেতারা দেশব্যাপী শেষ হওয়া সফরের ফলাফল, ওলামা-মাশায়েখ, দলমত নির্বিশেষে তৌহিদী জনতার ব্যাপক সমর্থন, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ, প্রচারণা ও জেলা কমিটির প্রস্তুতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ লংমার্চ কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ও বিভিন্ন কৌশল নিয়ে নিজ নিজ অভিমত প্রকাশ করেন। বৈঠকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর প্রত্যেক জেলা কমিটিকে লংমার্চ কাফেলা পরিচালনা করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীতে লিফলেট বিতরণ করতে রাস্তায় শোডাউন করেছেন হেফাজতে ইসলামের কয়েক শ’ সমর্থক। তারা মোটরসাইকেলে চড়ে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের সামনে থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত বিশাল জায়গায় লিফলেট বিলি করেন। পরে কর্মসূচি শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে নেতারা লংমার্চ বাতিলের জন্য যারা কাজ করছেন তাদেরকে সরকারের দালাল বলে মন্তব্য করেন। মিছিলের নেতৃত্ব দেন মঈনুদ্দিন রুহি। এই সময় শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিপুল পরিমাণ প্রচারপত্র ছাপানোর বিষয়টি সত্য বলে জানান সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ প্রচারপত্র ছাপিয়েছি। এর মধ্যে ১৫-১৬ লাখ লিফলেট। পোস্টারও আছে কয়েক লাখ। সব কিছু মিলিয়ে বলতে পারেন প্রচারণার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এগুলো ছাপা হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা থেকে বেশি। হাটহাজারী থেকেও ছাপানো হয়েছে। ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ঢাকার লালবাগ থেকেও প্রচারপত্র ছাপানো হচ্ছে। সবকিছুই ঠিক করা হয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার হুজুর (আহমদ শফী) সাহেবের পরামর্শে।’

No comments

Powered by Blogger.