হেফাজত লংমার্চে সহিংসতার উদ্বেগ আওয়ামী লীগে

বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে লংমার্চ কর্মসূচিকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের কৌশল তাদের জোটের মধ্য থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছে।
তবে তা নাকচ করে সরকার বলছে, জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্রশিবির অন্য সংগঠনের লংমার্চ কর্মসূচিতে ভিড়ে কোন সহিংসতা ছড়াবে কিনা, সেই উদ্বেগ সরকারে রয়েছে। অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলাম বলেছে যে তাদের ৬ই এপ্রিলের লংমার্চে লক্ষ্য সরকার পতন নয়।

"ব্লগারদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনের প্রতি সরকার ভিন্ন অবস্থান নিলো এবং এটা সরকারের জন্য আত্নঘাতী হবে।" ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ায় চিহ্নিত ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩-দফা দাবিতে সংগঠনটি সারাদেশ থেকে ঢাকামুখে এই লংমার্চ কর্মসূচি নিয়েছে। লংমার্চ কর্মসূচির পেছনে হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটির মুল দাবি হচ্ছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সেই দাবি পূরণে সরকারের তৎপরতা লক্ষণীয়। গত দু’দিনে চারজন ব্লগারকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি দেশে এখন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যে বিধান রয়েছে, তাতে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের ভূমিকা বা কৌশল নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের বৈঠক থেকেই সমালোচনা উঠেছে। জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কাস পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন মনে করেন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনের মুল উদ্যোক্তা ছিল। সেখানে ইসলামপন্থী সংগঠনের লংমার্চকে ঘিরে সরকার বিপরীতমুখী অবস্থান নিচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।তিনি বলেন, ''ব্লগারদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনের প্রতি সরকার ভিন্ন অবস্থান নিলো এবং এটা সরকারের জন্য আত্নঘাতী হবে। দুই নৌকায় পা দেওয়ার কিছু নেই।''লংমার্চ কর্মসূচি যাতে প্রত্যাহার করা হয়, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে একজন মন্ত্রী হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। তাতে কোন ফল হয়নি।যদিও সরকারের মধ্যে একটা উদ্বেগ রয়েছে যে, জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্র শিবির অন্য সংগঠনের লংমার্চের সুযোগে সহিংসতা ছড়াতে পারে।
কিন্তু সরকারের কৌশল নিয়ে শরিক দলের সমালোচনা নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ।তিনি বলেন, ''দুই নৌকায় পা দেওয়ার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নতুন প্রজন্মের এদেশের নাগরিক হিসেবে কর্মসূচি পালনের গণতান্ত্রিক অধিকার যেমন রয়েছে। তেমনি ধর্মপ্রাণ সংগঠনগুলোর অধিকার আছে, এদেশে বসবাসের এবং কর্মসূচি পালনের। সেখানে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের অধিকার দেওয়ার ব্যাপারেই সরকার কাজ করছে।''লংমার্চ কর্মসূচির প্রতি প্রধান বিরোধীদল বিএনপিও ইতিমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে। তবে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, লংমার্চ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানান আশংকার যে কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। তারা শান্তপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করবেন।তিনি বলেন, ''আমাদের এই কর্মসূচি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। সরকারের পতন ঘটানো বা কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আমরা কর্মসূচি নেই নি।''''ঈমানী দায়িত্ব থেকে কর্মসূচি পালন করবো এবং তা হবে শান্তিপূর্ণ। সেজন্য সারাদেশে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে।''হেফাজতে ইসলামের নেতারা আরও জানিয়েছেন, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর সারা দেশ থেকে ঢাকা মুখে লংমার্চ শুরু হবে।শনিবার দিনভর ঢাকায় অবস্থানের পর বিকেলে সমাবেশ করে কর্মসূচি শেষ করা হবে।সূত্র: বিবিসি বাংলা।

No comments

Powered by Blogger.