রাজনৈতিক অস্থিরতায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চামড়া শিল্প by মফিজুল সাদিক

দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল, অবরোধ ও সরকারের পৃষ্টপোষকতার অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে দেশের রপ্তানিমূখী চামড়া শিল্প। হরতালের কারণে দেশের ২১০টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কাজ ব্যহত হচ্ছে।
সরকারের যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়াসহ অবকাঠামো সমস্যার কারণে একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে অন্যদিকে বর্হিবিশ্বেও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। কেননা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চাহিদা ও শর্তানুসারে ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি এই খাতকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখার অনুরোধ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, চামড়া শিল্প মালিকরা নিয়মিতভাবে চামড়া রফতানি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরগুলোতে চামড়াবাহী জাহাজ হরতালের কারণে মালামাল খালাসে দেরি হওয়ায় অনেক সময় ধরে বন্দরে আটকে থাকে। এছাড়া পণ্য খালাসসহ মালামাল ওঠানামার কাজে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়।

এতে করে নির্দিষ্ট সময়ে চামড়া বিদেশে রপ্তানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এছাড়া হরতালে যানবাহন সংকটের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়া ব্যবসায়ীরা বেশি মূল্যে চামড়া কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।কিন্ত বেশি দামে বিদেশে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে কাঁচা চামড়ার মূল্যও বেড়েছে। প্রতি ফুট গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যেখানে এক মাস আগেও এর মূল্য ছিল ৭০ টাকা। একমাস আগে যেখানে প্রতিফুট ছাগলের চামড়া বিক্রি হতো ৫৫ টাকায়, বর্তমানে মূল্য বেড়ে তা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ফুট মহিষের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, যার মূল্য ছিল ৬০ টাকা।

হাজারীবাগ এইচ এস ট্যানারি মালিক হাফেজ আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, “হরতাল ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে নিয়মিতভাবে চামড়া রপ্তানি ও আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে করে ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে।বিদেশি ক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে অর্ডার বাতিল করে অন্যদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে বাধ্য হচ্ছেন।কারণ হরতালের কারণে নির্দ্দিষ্ট সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে না পারায় আমরা তাদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক ধরে রাখতে পারছি না।”

তিনি আরো বলেন, “দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি ঠিক না হয় তবে আমাদের ব্যবসা ছেড়ে পথে বসতে হবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা ব্যাংক থেকে যে সুদ নিয়েছি তা সময় মতো পরিশোধ করতে পারবো না।”

চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখা এবং বিদেশের সঙ্গে সু- সম্পর্ক ধরে রাখার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমঝোতা চায় চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে। তা না হলে চামড়া রপ্তানি কারক দেশ চীন, তাইওয়ান, হংকং, ইটালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

২০১২-১৩ অর্থবছরে চামড়া শিল্প থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা সম্ভব হবে না বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হাই বাংলানিউজকে বলেন,“ রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে আমদানি ও রপ্তানি কাজ ব্যহত হচ্ছে। প্রতি হরতালে কোটি কোটি টাকার উৎপাদন কাজ ব্যহত হচ্ছে। 

তিনি বলেন, “চামড়া শিল্প থেকে আয়ের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিদেশের সঙ্গে যে সব চুক্তি করা হয়েছে সেই অনুযায়ী চামড়া ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে না। এতে করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “হরতালের কারণে চামড়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ চট্টগ্রাম থেকে সময় মতো ঢাকায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।”

চামড়া শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণের লক্ষ্যে তিনি সরকার ও বিরোধী দলের সমঝোতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অন্যথায় চামড়া ব্যবসা ছেড়ে পালাতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মোহাম্মদ আব্দুল হাই।

No comments

Powered by Blogger.