মাহমুদুর রহমানের মতের সঙ্গে একমত নই by অমিত রহমান

মাহমুদুর রহমানের মতের সঙ্গে আমি অনেক ক্ষেত্রেই একমত নই। আমি তার একজন কট্টর সমালোচকও। তাই বলে তার মত প্রকাশে বাধা দেবো সেটা কি করে হয়। যত মত-তত পথ যদি আমরা বিশ্বাস করি তাহলে অন্যের মতকে হত্যা করব কেন? উল্লাসইবা করবো কোন যুক্তিতে।
একজন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী উল্লাসে মত্ত হতে পারেন। বলতে পারেন একটি মতকে দমিয়ে আমরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছি। তাই বলে একজন সাংবাদিক কি করে এই কোরাসে যোগ দেন। আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তারের পর কোন কোন টেলিভিশন টকশোতে দেখলাম কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক সরকারি নিপীড়নকে কার্যত সমর্থন জুগিয়েছেন। এর মধ্যে একজন প্রবীণ সাংবাদিক তো খোলামেলা সমর্থন জানিয়ে বসলেন। তার অবস্থান এবং রাজনৈতিক পরিচয় অবশ্য সবার জানা। তাতে কি? দীর্ঘ সময় ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন। এক সময় নেতৃত্বও দিয়েছেন। সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে, ভালবাসে। তার কাছ থেকে মানুষ নিরপেক্ষ মূল্যায়ন শুনতে চায়। মাহমুদুর রহমান ফেরেস্তা নন যে তার সমালোচনা করা যাবে না। তার সমালোচনা অবশ্যই হবে এবং হওয়া উচিত। তিনিও ভিন্ন মতকে বেশি প্রাধান্য দিতে চান না। এমনভাবে নিজের মতকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন, যা শুনে অন্যপক্ষের রাগ হতেই পারে। আমি নিজেও অনেক সময় তাকে বলেছি। ঔদ্ধত্য স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। কোন কিছুতেই সীমা লঙ্ঘন করা ঠিক নয়। মাহমুদুর রহমান একটি মতে বিশ্বাস করেন। তার বিশ্বাস নিয়ে আমি কোন প্রশ্ন তুলবো না। কারণ, ভিন্নমত না থাকলে একটি সমাজে বসবাস করাই কঠিন। আর যদি গণতন্ত্রের কথা বলেন, তাহলে তো কথাই নেই। নানা মত থাকতেই হবে। না হলে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। দেশে দেশে আমরা দেখেছি। স্বাধীন বাংলাদেশেও আমরা দেখেছি। নব্বই দশকের পর এদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তেমন উন্নতি না হলেও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশ ঘটেছে। আমরা কেন, সরকারও বিদেশীদের কাছে বলার সময় বড়াই করে বলেন আমাদের প্রেস স্বাধীন। আমি অস্বীকার করি না। প্রেসের অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। তবে সেলফ সেন্সরশিপও কার্যকর রয়েছে। আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান স্বাধীনচেতা মানুষ। কোন কিছুতেই আপস করতে চান না। তিনি দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন মানতে চান না। এজন্য তাকে বারবার মূল্য দিতে হয় এবং হচ্ছে। ১৩ দিনের রিমান্ডে একজন সম্পাদককে নেয়ার পর সাংবাদিক সমাজের মধ্যেই বলতে শুনি এটা নাকি তার প্রাপ্য ছিল। এ কোন সাংবাদিকতা। আপনি কেন ভাবছেন এটাই শেষ সরকার। যুগে যুগে কালে কালে আরও সরকার আসবে। আপনি তখন ভিকটিম হতে পারেন। নির্যাতনের খড়গ আপনার ওপরও নেমে আসতে পারে। তখন আপনার পাশে কে দাঁড়াবে। সাংবাদিকরা এখন দু’ভাগে বিভক্ত। সমাজ যেখানে বিভক্ত সেখানে সাংবাদিকরা বিভক্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক। আমরা যারা এ বিভাজনে বিশ্বাস করি না তাদের হয়েছে বড় বিপদ। যাওয়ার জায়গা নেই কোথাও। অনেকে বলেন আমরা নাকি বোকা! আমি তাদের বলি আখেরে তৃতীয় মতই জয়ী হবে। যেভাবে চলছে এভাবে কি দেশটা চলবে? রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলে থাকেন বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্ক নাকি জটিল। সহজে মেলানো যায় না। আপাতদৃষ্টে তাই মনে হলেও সময়ই বলে দেবে কারা সঠিক ছিলেন। সাংবাদিকদের কাছে জনমানুষের অনেক প্রত্যাশা। মানুষ চায় সাংবাদিকরা জাতির প্রয়োজনে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সাহসী ভূমিকা রাখবেন। নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির একটি বিদেশী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি মাহমুদুর রহমানের মতের সঙ্গে মোটেই একমত নই। তাই বলে তার গ্রেপ্তার ও রিমান্ড চোখ বুঁজে মেনে নেবো তা হয় না। প্রতিবাদ আমাকে করতে হবে।’ এটা সবার জানা কবির কি মতে বিশ্বাস করেন। তার মধ্যে কোন প্যাঁচগোচ নেই। যা সত্য তাই বলেন, কারও রক্তচক্ষুতে ভয় পান না। শটতা নেই। জরুরি জমানায় জাতি তার সাক্ষী। তিনিও বলছেন ভিন্নমতকে এভাবে দমন করা যায় না। দেশটা জ্বলছে হিংসার আগুনে। শহর ছেড়ে নিভৃত পল্লীও এই আগুনে পুড়ছে। কোথায় গিয়ে ঠেকবে কেউ জানে না। যারা এই আগুন লাগিয়েছেন বা রসদ জুগিয়েছেন তারাই কেবল জানেন। দূরে বসে তারা হাসছেন আর বলছেন, আবেগপ্রবণ এই জাতি বড় সহজে হার মানে! এটাও বলা যায় এই ভূখণ্ডের মানুষের ভালবাসা হচ্ছে কচুপাতায় পানি রাখার মতো। মুহূর্তেই পড়ে যায়। ওলট-পালট করে দেয় সবকিছু। তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব যাদের ওপর তারা যখন বিভিন্ন টকশোতে গিয়ে একমতের সৈনিকের ভূমিকা পালন করেন, তখন কি বলার আছে। মানবাধিকার কমিশনও একই।

No comments

Powered by Blogger.