দেশ অচলের হুমকি দিলো হেফাজতে ইসলাম

মাহমুদুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া না হলে ও ১৩ দফা দাবি না মেনে নিলে আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধের মাধ্যমে  সারা দেশ অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
তারা দাবি করেন মাহমুদুর রহমান নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এবং ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণেই তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়া না হলে হেফাজতে ইসলাম সারা দেশ অচল করে দিয়ে তাকে মুক্ত করে আনবে।

শুক্রবার বিকাল ৪টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটের উল্টোদিকে হাউজ বিল্ডিং গলিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজতের নেতারা এ হুমকি দেন।

মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও তার মুক্তি, সারাদেশে হেফাজত নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলাম।

‘‘হেফাজত লেজ গুটিয়ে চট্রগ্রাম চলে গেছে’’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হেফাজত নেতারা বলেন, লেজ গুটানোর অভ্যাস আওয়ামী লীগের আছে। এ দেশের ইসলাম প্রিয় মানুষের নেই। তারা বলেন, ‘৫ মে প্রমাণ হবে কারা লেজ গুটায় আর কে রাজপথে থাকে।

নেতারা সৈয়দ আশরাফ এবং মাহবুব উল-আলম হানিফকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এখনও সময় আছে মুখ সামলে কথা বলুন। না হয় পালাবার পথ পাবেন না।’

বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম আহ্বায়ক মওলানা আব্দুর রউফ ইউসুফী বলেন, ৬ এপ্রিল লং মার্চের জনসমাবেশ দেখে সরকার পাগল হয়ে গেছে। এখন তারা আবোল-তাবোল বকছেন।

তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কতিপয় নাস্তিক ব্লগারের উপদেশ না শুনে কোটি কোটি ইসলাম প্রিয় মানুষের কাতারে আসুন।’

মাহুমুদুর রহমানের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি ইসলামের পক্ষে কথা বলায় সরকারে রোষানলে পড়েছেন। অবিলম্বে তাকে মুক্তি না দেওয়া হলো জেলের তালা ভেঙ্গে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসা হবে। 

সরকার নাস্তিক মুরতাদদের বন্ধুতে পরিণত হয়েছে দাবি  করে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘সরকার আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে নাস্তিকের পক্ষ অবস্থান নিয়েছে। সরকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই আপনারও পারবেন না।’

আ.লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মুখ সামলে কথা বলবেন। না হলে আপামর জনতা আপনাদের উচিত জবাব দেবে। কিছু সুশীল মানুষ হেফাজত সম্পর্কে অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। অথচ তারা জাতীয় পতাকার নিচে অবাধে নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকে। এদেশের মাটিতে নারী অধিকার নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না।’

মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে সমাবেশে বক্তারা বলেন,  ‘ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে লেখার কারণে মাহমুদুর রহমানকে সরকার গ্রেপ্তার করেছে। অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিন। না হলে আপনাদের পরিণতি ভয়াবহ হবে।’

আ.লীগ নেতাদের কঠোর সমালোচনা করে অন্যান্য হেফাজত নেতারা বলেন, ৬ এপ্রিল লং মার্চ ও মহাসমাবেশে দেখে সরকার দিশেহারা হয়ে গেছেন। আগামী ৫ মে তাদের লেজ গুটিয়ে ভারত পাঠিয়ে দেয়া হবে। একইসঙ্গে ইসলামকে যারা মধ্যযুগীয় বলে, তারা বাংলাদেশের মুসলমানদের ভাষা বুঝতে পারে না। মাহবুব উল হানিফ কোরআন হাদীসকে মধ্যযুগীয় বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রত্যাহার না করলে দেশের তৌহিদী জনতা তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করবে। 

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা ইসহাক, মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ন কবীর, হেফাজতের নেতা মুফতি তৈয়্যব, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সফির উদ্দিন, নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল করিম, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মাওলানা নুর হোসেন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে পল্টন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল দৈনিক বাংলা, মতিঝিল শাপলা চত্বর ঘুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট সংলগ্ন ওভার ব্রিজের নিচে এসে শেষ হয়।

No comments

Powered by Blogger.