হাসিনা কোনটা বেছে নেবেন by অমিত রহমান

চারদিকে তুফান আলোচনা চলছে বিরোধী নেত্রীর বক্তব্য নিয়ে। কেউ কেউ তো অঙ্ক মিলিয়ে ফেলেছেন। বলছেন ‘পরিবর্তন’ নাকি আসন্ন। কি সে পরিবর্তন। নানা ইঙ্গিত, নানা মহলে। যেহেতু বিরোধী নেত্রী সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেই থামেননি।
আরও দূর এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। তাই ঘরে বাইরে আলোচনা অসাংবিধানিক পরিবর্তনকে ঘিরে। বিরোধীনেত্রী কি চেয়েছেন। তা তিনি স্পষ্ট করছেন না। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলার চেষ্টা করছেন, এটা কোন উস্কানি নয়। দেশ সেবায় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেছেন মাত্র। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে কোন মন্তব্যই করছেন না। যেখানে কোন বিষয় পেলে কোন সময়ই তিনি ছাড় দিতে চান না। এতো কিছুর পরও তিনি কেন নীরব রয়েছেন তা নিয়ে জল্পনা হতেই পারে। কিছুদিন আগে হলে হাসিনা কি করতেন? খালেদার বিরুদ্ধে অন্তত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা হতো। যেমনটা বলেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার বক্তৃতায়ও তেজ কম। তিনি বলেছেন, অন্য কোন দেশে হলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হতো। মামলা হবে বা করা উচিত তা-ও তিনি বলেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর তার স্বভাবসুলভ কায়দায় বলেছেন বটে। তবে তার বক্তৃতায় তেমন চাঞ্চল্য নেই। মন্ত্রিসভার বৈঠকে শেখ হাসিনার সামনে মন্ত্রীরা খালেদাকে এক হাত নিতে বললেও তিনি ছিলেন একদম চুপচাপ। তাহলে কি দাঁড়ালো? খালেদা বড় রকমের রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে সরকারের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন। সরকার তত্ত্বাবধায়কে রাজি হলে এক রকম হতে পারে। আর যদি সরকার কোন আলোচনায় না আসে তখন তিনি বলবেন, আমি তো সুযোগ দিয়েছিলাম। সরকার তো সুযোগ নেয়নি। তখন যা হওয়ার হবে। খালেদার বক্তৃতার পর নানামুখী চাপে রয়েছেন হাসিনা। তিনি ভাবছেন কি করা যায়? হয় সমঝোতা না হয় আরও হার্ডলাইন। তার পরামর্শকরা বলছেন, আলোচনার পথ খোলা রাখা ভাল। না হলে অন্য কিছু যে হবে তা কিন্তু প্রায় নিশ্চিত। প্রশাসনেও তীব্র প্রতিক্রিয়া। পুলিশ প্রশাসন যে কোন সময় বেঁকে বসতে পারে। সিনিয়র অফিসারদের যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে তাতে অন্য বার্তা পাচ্ছে সরকার পুলিশের কাছ থেকে। জেলা প্রশাসনেও সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যে ব্লগারদের কারণে সরকার জনআস্থা হারালো তারাও এখন চাপ সৃষ্টি করছে। এই খেলাটা কি? খেলাটা আপসে হলেও ভুল বার্তা যাচ্ছে জনগণের কাছে। হরতালে, হরতালে একদম কাবু হয়ে পড়েছে দেশ। ব্যবসায়ীরা তটস্থ। অনেকেই বিদেশমুখী হয়ে পড়েছেন। জনআশঙ্কা জনবিক্ষোভে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায় থেকে যে খবরা-খবর সরকার পাচ্ছে তাতে মনে হয়, এরশাদের শেষ দিকে যে অবস্থার তৈরি হয়েছিল সে রকম হয়ে গেছে। তাই যে কোন সময় বিরোধীদের পুরোপুরি কবজায় চলে যাবে জেলা প্রশাসন। সরকারকে যে সব দেশ অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে আসছিল তারা কিন্তু বিকল্প পথে হাঁটতে শুরু করেছে। ‘সম্ভাব্য শক্তি’কে আমন্ত্রণ জানিয়ে জানার চেষ্টা করছে আসলে কি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। নিকট অতীতে যারা মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল তারাই একপর্যায়ে শেখ হাসিনাকে বেছে নিয়েছিল। বলেছিল মন্দের ভাল। অর্থাৎ তারা ভালবেসে আপন করতে চায়নি মনে-প্রাণে। এখন অবস্থা দেখে নীতি কৌশল পরিবর্তন করতে চাইছে। শেখ হাসিনা এটা জানেন। জানেন বলেই এখন তিনি নিজের মতো করে খেলার চেষ্টা করছেন। এতোদিন দুই টার্মের স্বপ্নে তিনি বিভোর ছিলেন। এই স্বপ্ন তাকে গ্যাঁড়াকলে ফেলে দিয়েছে। যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব না হলেও কঠিন। এটা বোধ করি তার কমিউন্ট মন্ত্রণা দাতারা ইতিমধ্যেই বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। রাজনৈতিক পন্ডিতরা বলছেন, শেখ হাসিনা যদি রাজনৈতিকভাবে চলমান সঙ্কটের সমাধান চান তাহলে খালেদার প্রস্তাবে সায় দেবেন। আর যদি আসাদ, গাদ্দাফি, মোবারকের পথ ধরেন তাহলে অন্য কথা। আখেরে গাদ্দাফিরা পরাজিত হন। এটা সবাই জানেন। তারপরও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। ভাগ্যকে নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়ে মসনদে বসে রঙিন চশমায় স্বপ্ন দেখেন।

No comments

Powered by Blogger.