আগুন-ককটেলে হরতাল শুরু

বিরোধী দলের ডাকা দেশব্যাপি ৩৬ ঘণ্টার একটানা হরতাল শুরু হয়েছে। দিনের শুরুতে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে ঢিলেঢালা পিকেটিং চলছে।
সরকার বিরোধী এই কর্মসূচি সফল করতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে চাইলে বাধা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে সরকার দলীয় কর্মীরাও। রাজপথে বিরোধীদের দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে  ভোর ৬টা থেকে হরতাল শুরু হলেও রাজপথ মূলত পিকেটার শূন্য। দুয়েকটি জায়গায় হরতাল সমর্থকদের দেখা গেছে। কিন্তু পুলিশি ধাওয়ায় তারা রাজপথে দাঁড়াতে পারেনি। অবশ্য কোথাও কোথাও ঝটিকা মিছিল বের করার খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি স্থানে হাতবোমা (ককটেল) বিষ্ফোরণও হয়েছে। যানবাহন ও গাড়ির টায়ারে আগুন দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও বিরোধী নেতাকর্মী সংঘর্ষে একাধিক জায়গায় আহত হয়েছেন অনেকে। রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সকাল পর্যন্ত ফাঁকা। মুল গেইটে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। কলাপসিপল গেটের ভেতরে কাউকে দেখা যায়নি। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল ছ’টার কিছু আগে অফিসে ঢুকেন। যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ এসেছেন তারও আগে। আরও কয়েকজন নেতা রয়েছেন সেখানে। তবে অফিস ও আশাপাশ এলাকা রয়েছে কর্মীশূন্য। সেখানটা ঘিরে রেখেছে র‌্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে তারা।
পেছনের হরতালের মতই রাজধানীতে সকালের দিকে অল্প কিছু যানবাহনকে চলতে  দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সংখ্যাও বাড়ে। তবে এর সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের তুলনায় একেবারেই কম। রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ি নেই বললেই চলে। রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, বাংলা মোটর, তেজগাঁও, শান্তিনগর, শাহবাগ, পল্টন, কমলাপুর, খিলগাঁও, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে সকালে দিনের প্রথম ভাগে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিল করেছে। মিরপুর-১১ নম্বর বাজার থেকে শুরু হয়ে কিছু দূর গিয়েই শেষ হয় মিছিলটি। মিছিলে পল্লবী থানা জামায়াতে ইসলাম এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মিছিলকারীরা কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।
সকাল ৭টায় মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে ঝটিকা মিছিল করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। এসময় একটি ককটেল বিষ্ফোরণ ও টায়ারে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। মিছিল শুরুর কিছুক্ষণ পর পুলিশ ধাওয়া করলে মিছিলকারীরা বিভিন্ন গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডিতে ৩টি ককটেল বিষ্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এ সময় হরতালের সমর্থকতার সাতমসজিদ রোডে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
তেজগাঁও এলাকায় সকাল সাড়ে ৭টায় থানা ছাত্রদলের উদ্যোগে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে। এ সময় মিছিল থেকে পিকেটাররা ৩টি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর ও একটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের অপর মিছিলটি কদমতলীর ইত্যাদি খেলার মাঠের সামনে থেকে বের হয়। সেখানেও ৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অভিজাত এলাকা গুলশানে হরতাল সমর্থনের মিছিল থেকে ৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। সকাল পৌনে নয়টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল  থেকে ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। হরতালের সর্মথনে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মীরা। মিছিলটি থেকে কলরেডি মোড়ে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হরতাল সমর্থকরা। সাড়ে ছয়টায় উত্তরার আজমপুরে ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াত। সকাল  পৌনে সাতটার দিকে বাড্ডা এলাকায় মার্কিন দূতাবাসের পাশের গলিতে মিছিল বের করে যুবদল। সকাল সাতটার দিকে যাত্রাবাড়ির শহীদ ফারুক হোসেন রোডে দু’টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। হাতিরঝিলে সিএনজি চালিত একটি অটোরিকশা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
সিলেটে ভোরে পুলিশের গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থকরা। চৌহাট্টা পয়েন্টে পুলিশ বহনকারী একটি লেগুনায় ঝটিকা হামলা চালায় শিবিরকর্মীরা। এসময় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে তারা পালিয়ে যায়। এতে ৫ পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হন। এছাড়া হরতালের শুরুতে খুলনায় ককটেল বিষ্পোরণ, কাভার্টভ্যানে আগুন, রাজশাহীতে পুলিশের উপর হামলা ও ককটেল বিষ্ফোরণ এবং নারায়নগঞ্জেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

No comments

Powered by Blogger.