দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়ছে মিয়ানমারের দাঙ্গা

মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে মিয়ানমারে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো দাঙ্গার ভয়াবহতায় দেশটিকে ‘দাঙ্গার দেশ’ বলেও অভিযুক্ত করছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কেবল রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যকার প্রাণঘাতী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সীমাবদ্ধ থাকলেও গত সপ্তাহের বুধবার মধ্যাঞ্চলীয় শহর মেইকতিলায় শুরু হওয়া দাঙ্গার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশটিতে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর মতে, উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিন, মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য ম্যান্দালয় এবং দক্ষিণ উপকূলীয় রাজ্য বাগোসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কার্যত যুদ্ধাবস্থ‍া বিরাজ করছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সুযোগ খুঁজছে অন্য অঞ্চলের দাঙ্গাকারীরাও।

মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো মধ্যাঞ্চলীয় ম্যান্দালয় রাজ্যের রাজধানী মেইকতিলা শহরে দাঙ্গার জের ধরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর ঐ অঞ্চলকে ‘ওয়ার জোন’ (যুদ্ধাঞ্চল) হিসেবে উল্লেখ করেছে। মেইকতিলার দাঙ্গায় অন্তত ৪০ জন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো। এছাড়া, মঙ্গলবার সকালেও এ অঞ্চল থেকে ৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মেইকতিলার সংসদ সদস্য উইন থেইন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “সহিংসতায় জড়িতদের বেশিরভাগই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোক। এদের অনেককে ইতোমধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।”

এছাড়া প্রধান শহর মেইকতিলা ছাড়িয়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে ম্যান্দালয়ের ওহ দ্য কোন, তাতকোন ও পাশ্ববর্তী ইয়ামেথিন শহরেও। জানা গেছে, এসব শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দাঙ্গাকারীরা বেশ কয়েকটি মসজিদসহ প্রায় শতাধিক বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে।

অন্য দিকে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দেশটির সর্বোত্তরের রাজ্য কাচিনেও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এখানকার কয়েকটি অঞ্চলে মসজিদ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কাচিনে নির্বিচারে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে মালয়েশিয়া প্রবাসী রোহিঙ্গা মুসলিমরা।

সোমবারের পর মঙ্গলবারও দফায় দফায় মসজিদ ও বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ইয়াঙ্গুনের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরের রাজ্য বাগোতেও।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রিয় টেলিভিশন এ দাঙ্গায় বেশ কয়েকটি মসজিদ, বাড়িঘর, শপিংমল ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার কথা স্বীকার করে।

নিরাপত্তা বাহিনীর আইন অনুসারে পরবর্তী সময়ে যে কোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে পেগু শহর নামে পরিচিত বাগোতে।

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ম্যান্দালয় রাজ্যে ভ্রমণ থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছে রেঙ্গুনে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসসহ বেশ কয়েকটি দূতাবাস।

এ দিকে, ভয়াবহ আকার ধারণ করা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণ করতে মঙ্গলবার নাইপিদো পৌঁছেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা বিজয় নম্বিয়ার। মিয়ানমার পৌঁছেই বাড়িঘর ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে ‘ন্যাক্কারজনক হামলার’ নিন্দা জানান তিনি।

মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যকার দাঙ্গাকে উস্কানি দিতে অপপ্রচারেরও নিন্দা জানান জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত। সবার সহযোগিতায় শিগগির এ ধরনের সহিংসতা বন্ধের আহবান জানান বিজয়।

প্রসঙ্গত, গত বছর বাংলাদেশের পাশ্বর্বর্তী উপকূলাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গায় ১১০ জনের প্রাণহানি হয় বলে দাবি করে দেশটির সামরিক সরকার। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারের এ দাবি নাকচ করে এর কয়েকগুণ বেশি নিহত হওয়ার কথা জানায়।

No comments

Powered by Blogger.